কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে গভীর রাতে ধরে নিয়ে দন্ড দেয়ার ঘটনায় আজ সোমবার, ১৬ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। সেখানে বলা হচ্ছে, সেই সিনিয়র সহকারী কমিশনার (আরডিসি) নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে আরও ‘কঠিন ব্যবস্থা’ নেয়া হচ্ছে। পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
কুড়িগ্রামে গভীর রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে এক সাংবাদিককে নির্যাতন ও কারাদণ্ড প্রদানের অভিযোগে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (আরডিসি) নাজিম উদ্দীন এবং আরো দুই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
কুড়িগ্রামে জেলা প্রশাসক হিসেবে রেজাউল করিম নামে একজন উপসচিবকে দায়িত্বও দেয়া হয়েছে।
প্রত্যাহার হওয়া বাকি দুজন হলেন সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলাম।
দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, প্রত্যাহার করা এই কর্মকর্তাদের মধ্যে আরডিসি নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে আরো ‘কঠিন ব্যবস্থা’ নেয়া হতে যাচ্ছে। এমন ব্যবস্থা যা ‘তার এবং তার চাকরি, পরিবার ও সামাজিক অবস্থার জন্য বেদনাদায়ক ও অপমানকর হবে’।
রবিবার কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্রসফায়ারের হুমকি ও শারিরীক নির্যাতনের অভিযোগ করবার সময় বারবার আরডিসি নাজিম উদ্দীনের নাম উল্লেখ করছিলেন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম।
যদিও এ নিয়ে বক্তব্যের জন্য নাজিম উদ্দীনের টেলিফোনে বারবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি, কিন্তু একদিন পর দেখা গেল, কুড়িগ্রাম থেকে যেসব কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে তাদের মধ্যে এই নাজিম উদ্দীনও রয়েছেন।
এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে নাজিম উদ্দীনকে দেখা গেছে এক বৃদ্ধকে শারিরীকভাবে নির্যাতন করতে।
বাংলাদেশের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো খবর দিচ্ছে, এই কর্মকর্তা এর আগেও আচরণগত কারণে একাধিকবার বদলি হয়েছেন।
বদলি কি শাস্তি?
জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলছেন, হ্যাঁ।
‘কোন কর্মকর্তার বদলি বিষয়টি হচ্ছে তার শোধরানোর একটা সুযোগ। সাধারণত শাস্তি হিসেবে এমন জায়গায় বদলি করা হয় যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না, কিংবা দুর্নীতি করার সুযোগ নেই’।
এছাড়া চাকরিতে যোগ দেয়ার আগেই আচরণ বিষয়ে বিস্তারিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকে বলেও জানান তিনি।
যেখানে সরকারি বিভিন্ন নিয়মকানুনের পাশাপাশি কার সাথে কিভাবে আচরণ করতে হবে, জনগণের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হবে সে বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
‘একজন ভাল কর্মকর্তা যাতে ভদ্রলোকের মতো আচরণ করে সে বিষয়ে নানা ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়,’ তিনি বলেন।
তবে তারপরেও সিভিল সার্ভিস যেহেতু একটি বড় সংগঠন তাই এখানে অনেক মানুষ আসে। সেখানে কিছু কিছু কর্মকর্তা, কিছু কিছু লোক খারাপ থাকতেই পারে বলে মন্তব্য করেন মিস্টার হারুন।
তিনি বলেন, ‘সব লোক যে ভাল সেটি আমরা মনে করি না’।
প্রশিক্ষণ ছাড়াও আচরণগত সংশোধনের জন্য বিভিন্ন ধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়।
‘যদি কোনো কর্মকর্তার ব্যবহার যদি এমন হয় যেটি অকর্মকর্তাসুলভ বা ভদ্রলোকের মতো আচরণ নয়, সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে বিভাগীয় মোকদ্দমা দায়ের করা হয়। আর আচরণ ফৌজদারি অপরাধমূলক হলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যায়। একই সাথে বিভাগীয় মামলাও হতে পারে’।
তবে এর পরও আচরণে সংশোধন না আসলে এবং একই ধরণের আচরণ বার বার করলে অনেক ক্ষেত্রে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয় বলে জানান তিনি।
নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে এর আগে বেশ কয়েকবার অভিযোগ এসেছে এবং এমন পরিস্থিতিতে কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে জনপ্রশাসন সচিব মিস্টার হারুন বলেন, কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করতে হয়।
‘অনেক ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না পাওয়ার কারণে অনেক ঘটনা নজর এড়িয়ে যায়। তাদেরকে যারা সুপারভাইজ করেন যেমন জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার যদি সময়মত অভিযোগ না দেয় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া যায় না’।
‘তবে এখন তার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটি খুবই কঠিন। তার এবং তার চাকরি, পরিবার ও সামাজিক অবস্থার জন্য বেদনাদায়ক ও অপমানকর হবে’, বলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই সচিব।
বদলি কি শাস্তি হিসেবে যথেষ্ট?
সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলি ইমাম মজুমদার বলেন, ‘বদলি একজন কর্মকর্তার পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে কিছুটা হলেও প্রভাব বিস্তার করে। তবে এটি অবশ্যই হালকা অভিযোগের প্রেক্ষাপটে হয়ে থাকে’।
কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলে সেক্ষেত্রে তাকে ‘চাকরিচ্যুত করাই শ্রেয়’ বলে মনে করেন তিনি।
তবে একই অভিযোগ বারবার এলে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা উচিত। সেই সাথে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় মামলা করা উচিত বলে জানান সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তা।