পাটগ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দখলের অভিযোগ

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় বিলুপ্ত ছিটমহলে নির্মিত চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন দখল করার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি বিশেষায়িত ‘বিদ্যালয় বিহীন ১৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের’ অধীনে এই বিদ্যালয়গুলোর ভবন নির্মান করা হয়।

জানা গেছে, বিলুপ্ত ছিটমহল ৮ নং ভোটবাড়ী, ১৪ নং লতামারী, ২১ নং পানিশালা ও ১১৯ নং বাঁশকাটা বিদ্যালয় বিহীন এলাকায় ও ২০১৬- ১৭ অর্থবছরে চার কক্ষ বিশিষ্ট ভোটবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লতামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পানিশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাঁশকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ভবন নির্মাণ করা হয়।

স্থানীয়দের ও অভিযোগ সূত্রে  জানা গেছে, নির্মাণের পরপরই সরকারি ওই বিদ্যালয় গুলো স্থানীয় বেসরকারী শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দাপট দেখিয়ে বাঁশকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কে বাঁশকাটা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে, লতামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে মৌলভী খিদির বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে, পানিশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে হাজী ছলেমান কবিরন নগর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ও ভোটবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আজিজুল নগর ভোটবাড়ী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে দখল করে।

সরকার নির্মিত প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন অবৈধ দখলমুক্ত করতে তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম চলতি বছরের ১৬ জুলাই ওই বেসরকারি বিদ্যালয়সমুহের প্রধান শিক্ষক সহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি প্রদান করে। কিন্তু এখনো কোনো কাজ হয়নি।

উপরন্তু ৪/৫ বছর আগে স্থাপিত বেসরকারী বিদ্যালয়ের নামে চলছে শ্রেণিপাঠ। কাগজে কলমে অনেক শিক্ষার্থী দেখানো হলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নগন্য।

শিক্ষকদের দাবি উপবৃত্তি ও স্কুল ফিটিং না থাকায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম। নির্মাণ সম্পন্নের পরই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট বিদ্যালয় ভবন গুলো হস্তান্তর করার বিধান থাকলেও রহস্যজনক কারণে তা করা হয়নি।

ওই বিদ্যালয় গুলোতে সরকারী পরিপত্র অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া ও শ্রেণিপাঠ পরিচালনা করার নিয়ম। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে অযত্নে অবহেলায় বিদ্যালয় ভবন গুলো অরক্ষিত হয়ে রয়েছে।

বাঁশকাটা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিব্য নাথ রায় বলেন, ‘গত ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ছিটমহল বিনিময় হলে তার পর- পরেই স্থানীয়দের সহায়তায় আমাদের স্কুল স্থাপিত হয়। এবং ২০১৬ সালে জানুয়ারীতে বই বিতরনের মাধ্যমে পাঠদান শুরু হয়। ইতিমধ্যে আমাদের তিনটি ব্যাচ সমাপনি পরিক্ষা দিয়েছে। আমাদের  বেসকারি যে বিদ্যালয়টি ছিল সেখানে সরকারী  ভবন হয়েছে। আমরা চাই আমাদের  যাতে ওই বিদ্যালয়ে চাকুরী স্থায়ীকরণ করা হয়।’

হাজী ছলেমান কবিরন নগর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহীন আলম বলেন, ‘অবশ্যই অবৈধভাবে ছিলাম না। বেসকারি যে বিদ্যালয়টি ছিল সেখানে ভবন হয়েছে। আগের টিও, এটিও স্যার অনুমোদন দিয়েছিল।’

লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম নবী বলেন, ‘সরকার অনেক টাকা ব্যয় করে ভবন করে দিয়েছে। বেসরকারি স্কুল কখনো সরকারি স্কুল দখল করতে পারবে না। আমি বিষয়টি জানতে পেরে পাটগ্রাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে শোকজ করেছিলাম। জবাব পেয়েছি। কিছুটা গাফিলতিও ছিল। খুব শ্রীগ্রই দখলে থাকা সরকারি স্কুল দখল মুক্ত করা হবে। আশা করা যাচ্ছে আগামী জানুয়ারী থেকে ওই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করা হবে ও সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।’

এনএ/রাতদিন