‘স্যার ভিক্ষা নয়, কাজ দেন’ পীরগঞ্জে শারীরিক প্রতিবন্ধী (বামনাকৃতি) লিটন নামে এক শিক্ষিত যুবক বিভিন্ন জনের কাছে এমনই আকুতি করে আসছিলেন। সম্প্রতি তাকে নিয়ে ফেসবুকে মানবিক আবেদন প্রকাশ হলে পীরগঞ্জের ইউএনও টিএমএ মমিন তার পাশে দাড়ান। আউটসোর্সিংয়ের জন্য একটি ল্যাপটপ তুলে দেন লিটনের হাতে।
শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে ইউএনও’র কার্যালয়ে ল্যাপটপটি বিতরন করা হয়।
এ সময় উপজেলার বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান, শিক্ষক, সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। ল্যাপটপ পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন লিটন।
জানা গেছে, উপজেলার কুমেদপুর ইউনিয়নের মরারপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক আবু তাহের মিয়ার ঘরে ২০০৭ সালের ১৭ আগস্ট লিটন জন্ম নেন। তার মা রাজিয়া বেগম। অন্য এক ভাই দুই বোন স্বাভাবিক আকৃতির হলেও লিটন জন্মগতভাবে বামনাকৃতির।
গ্রামের অনেকেই লিটনকে নিয়ে তিরষ্কার ও ব্যঙ্গাত্মক হাস্যরস করে। সেই তিরষ্কার জয় করেছেন শিক্ষার মাধ্যমে। তিনি কুমেদপুর কাদেরিয়া উমর উদ্দিন দ্বি-মুখী ফাযিল মাদরাসায় শিক্ষা জীবন শুরু করেন। সেখান থেকেই ২০১৬ তে দাখিল, ২০১৮ তে আলিম পাস করেন।
এখন ফাযিল ১ম বর্ষে। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় সরকারী শাহ আব্দুর রউফ ডিগ্রি কলেজে বাংলা বিষয়ে অনার্সে ভর্তির আবেদন করেছেন। বাবার অভাবের সংসারের বোঝা টানতে লিটন তার পড়ালেখার পাশাপাশি কাজের সন্ধান করতে থাকে।
একপর্যায়ে সে পীরগঞ্জের এমপি জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে কাজের আবেদন করে। স্পীকারের নির্দেশে পীরগঞ্জের ইউএনও প্রতিবন্ধী লিটনকে আইসিটিতে গ্রাফিকস্ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। প্রশিক্ষণ শেষেই আউটসোর্সিংয়ের জন্য প্রয়োজন একটি ল্যাপটপের। বিষয়টি ইউএনও জানার পর শুক্রবার বিকেলে তার কার্যালয়ে লিটনকে এই ল্যাপটপ প্রদান করেন।
ল্যাপটপটি পেয়ে আবেগাপ্লুত লিটন বলেন, ‘ইউএনও স্যারের কাছে ভিক্ষা চাইনি, কাজ চেয়েছি। আজ স্যার আমাকে ল্যাপটপটি দিয়ে আমার পরিবারের অভাব মোচনের জন্য সহযোগিতা করেছেন। এর আগে স্পীকার স্যারের কাছে গেলে তিনি আমাকে বিআরডিবি’র অধীনে আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করে দেন। আমি দু’জনের জন্য জীবনভর দোয়া করবো।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিএমএ মমিন বলেন, ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছেলেটি (লিটন) যাতে স্বাবলম্বী হতে পারে, সেজন্যই তাকে আইসিটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পারদর্শী করে গড়ে তোলা হয়েছে। যাতে সে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থান করতে পারে। সে শুধু কাজ চাওয়ায় আমি ব্যক্তিগত তাড়না থেকে এ ব্যবস্থা করেছি।’
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের প্রশাসন এভাবেই সাধারন মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। আর প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, লিটনই তা প্রমান করেছে। বামনাকৃতির হলেও সে তার শারীরিক অযোগ্যতাকে জয় করেছে।’