তরুণ-তরুণী শুধু নয়। মা-বাবার প্রতি সন্তানের। তেমনি মানুষে-মানুষে ভালোবাসাবাসি। ভালবাসা নানা বয়সী মানুষের। নানা রঙের মানুষের।
ভালোবাসার বহুমাত্রিক রূপ প্রকাশের আনুষ্ঠানিক দিন আজ। আজ `সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে` বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।
কিন্তু শুধু একটি দিন ভালোবাসার জন্য কেন?`
কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন, `ভালোবাসা একটি বিশেষ দিনের জন্য নয়। সারাবছর, সারাদিন ভালোবাসার। তবে আজকের এ দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে বেছে নিয়েছে মানুষ।`
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও গত কয়েক দশক ধরে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ভালবাসা দিবস। তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাসে এ দেশেও ভালোবাসা দিবস পালিত হচ্ছে।
ভালোবাসার উৎসবে মুখর আজ রাজধানী। এ উৎসবের ছোঁয়া লাগবে গ্রাম-বাংলাতেও। মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে পুঞ্জ পুঞ্জ প্রেমকথার কিশলয় হয়ে উঠবে পল্লবিত। একে অপরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবেন। বিনিময় হবে উপহার।
হয়তো নীল খামে হালকা লিপস্টিকের দাগ, একটা গোলাপ ফুল, চকোলেট, ক্যান্ডি, ছোট্ট চিরকুট। তাতে দু`ছত্র গদ্য অথবা পদ্য হয়ে উঠতে পারে উপহারের অনুষঙ্গ। প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য।
অন্যদিকে আজকের এ দিন শুধুই তাদের জন্য জন্য নয়। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, প্রিয় সন্তান এমনকি বন্ধুর জন্যও ভালোবাসার জয়গানে আপ্লুত হতে পারে সবাই।
দিনটিকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। রয়েছে বর্ণাঢ্য র্যালি, সূচনা সঙ্গীত, ভালোবাসার স্মৃতিচারণ, কবিতা আবৃত্তি, গান, ভালোবাসার চিঠি পাঠসহ নানা কিছু।
ইতিহাস বলছে, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে এ উৎসবের সূত্রপাত। এক খ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেনটাইনের নামানুসারে দিনটির নাম `ভ্যালেনটাইনস ডে` হয়।
২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টানবিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে মৃত্যুদন্ড দেন।
মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেনটাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন। চিঠির শেষে তিনি লিখেছিলেন `ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন`।
সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেনটাইনস ডে হিসেবে পালন শুরু করেন। ঠিক তখন থেকেই শুরু দিবসটি পালন।
তবে ভ্যালেনটাইনস ডে সর্বজনীন হয়ে ওঠে আরো পরে। প্রায় ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাওয়ার পেছনে রয়েছে আরো একটি কারণ।
সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মৃত্যুর আগে প্রতি বছর রোমানরা ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করত `জুনো` উৎসব। রোমান পুরানের বিয়ে ও সন্তানের দেবী জুনোর নামানুসারে এর নামকরণ। এ দিন অবিবাহিত তরুণরা কাগজে নাম লিখে লটারির মাধ্যমে তার নাচের সঙ্গীকে বেছে নিত। ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে রোমানরা যখন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীতে পরিণত হয় তখন `জুনো` উৎসব আর সেন্ট ভ্যালেনটাইনের আত্মত্যাগের দিনটিকে একই সূত্রে গেঁথে ১৪ ফেব্রুয়ারি `ভ্যালেনটাইনস ডে` হিসেবে উদযাপন শুরু হয়।
কালক্রমে এটি সমগ্র ইউরোপ এবং ইউরোপ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
এমএইচ/রাতদিন