মুক্তিযুদ্ধের সময় পুলিশের মাসোহারা গ্রহীতারা রাজাকার হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যেসব ব্যক্তি আলবদর, পিস কমিটি কিংবা রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থেকে থানা পুলিশের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়েছে তাদেরকে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। পাশাপাশি ওইসব বাহিনীর যারা নেতৃত্ব দিয়েছে বা পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসাবে যুক্ত থেকে গণহত্যা চালিয়েছে তাদের তালিকাও করছে সরকার।

তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে উদ্ধৃত করে দৈনিক ইত্তেফাক এই খবর প্রকাশ করেছে।

খবরে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজাকার চিহ্নিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান কামাল পত্রিকাটিকে জানান, ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) আবু বক্কর সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটি কাজ শুরু করেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়েও অনেক রাজাকারের তালিকা সংরক্ষিত আছে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পর যেসব ব্যক্তিকে গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবশ্য এসব ব্যক্তিকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য প্রায় ৩৭ হাজার ব্যক্তিকে মুক্তিযুদ্ধের পর গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২৬ হাজার জনকে সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১১ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরাসরি খুন, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও পর্যায়ক্রমে তারাও ছাড়া পেয়ে যায়।

মুক্তিযুদ্ধকালে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রকাশিত মেজর (অব.) আরেফিনের গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ৩৩ হাজার ব্যক্তি নিয়মিত পুলিশের কাছ থেকে মাসোহারা নিতো। তাদের নামের তালিকাও গ্রন্থে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।

বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা শাহরিয়ার কবীর বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে তারা বলছেন যে রাজাকারের তালিকা করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হোক। ইতিমধ্যে অনেক রাজাকার মারা গেছে। অনেকে আবার প্রাণে বাঁচতে রাজাকারের তালিকায় নাম লিখিয়েছে এটাও সত্য। কিন্তু যারা পুলিশের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়েছে তাদের চিহ্নিত করা কঠিন নয়। দেরিতে হলেও সরকার এ কাজে হাত দিয়েছে এটা ভালো উদ্যোগ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তালিকা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণায় যেসব নাম ওঠে এসেছে সেগুলো একত্রিত করে কমিটি যাচাই বাছাই করবে। নতুন করে থানা থেকে নাম আনা হবে। তারপর তা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী জানান, নাম ঠিকানা পাওয়ার পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। কে কোন অঞ্চলে গণহত্যায় জড়িত সেটি নির্ধারণ করে সেই এলাকায় তাদের নাম প্রকাশ করে দেওয়া হবে যাতে নতুন প্রজন্ম তাদের সম্পর্কে জানতে পারে।

এইচএ/রাতদিন