রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রায় প্রতিটি ছোট ছোট রাস্তার ধার দিয়েই বাঁশের খুঁটি পুতে ঝোলানো হয়েছে বিদ্যুতের তার। তারের জটলার ভার সইতে না পেরে বাঁশগুলো হেলে পড়েছে। কোথাও বা হেলে থাকা বাঁশ ঠেকনা দেওয়া হয়েছে আরেকটি বাঁশ দিয়ে। খাল ও পুকুরের পানি ছুঁই ছুঁই বিদ্যুৎ তারের সংযোগ। কোথাও তারে লতাপাতা জড়িয়ে তারকে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলেছে।
এমনি ঝুকিপূর্ণ একটি এলাকা হলো রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ও ১৯নং ওয়ার্ডের সংযোগ স্থল খটখটিয়ার টাইগার পাড়া। ওই এলাকার লালপুল ব্রিজ মোড় এলাকার অনেক বাড়িতে এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে নেসকো কোম্পানী।
এলাকাবাসী বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর ফলে জীবন নিয়ে ঝুঁকির মধ্যেই চলাচল ও বসবাস করতে হচ্ছে তাঁদের। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এক কিলোমিটারের কিছু বেশি রাস্তা জুড়ে বসানো বাঁশের খুঁটিতে ভরসা করেই ৩’শ বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। মূল লাইনটি যেখানে গিয়ে শেষ, সেখানে ঝোলানো হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগের ১০টি মিটার। বাকি মিটারগুলো বসানো গ্রাহকদের বাড়িতে।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন থেকে বিদ্যুৎ লাইন দক্ষিণে প্রায় ৫০০ গজ গিয়ে থেমে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুতের খুঁটির জন্য চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। কিন্তু খুঁটির ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়ে কর্তৃপক্ষ বাঁশ বসিয়ে সংযোগ দিয়েছে। গত পাঁচ-ছয় বছর এভাবেই চলছে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১০০ গজের বেশি দূরত্বে সার্ভিস লাইন দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। ১০০ গজের অতিরিক্ত দূরত্ব হলে অবশ্যই খুঁটি দিতে হবে, অন্যথায় সংযোগ দেওয়া যাবে না।
অথচ এ এলাকায় এক কিলোমিটারের বেশি দূরে গিয়ে খুঁটি বসানো হয়েছে। মাঝের স্থানগুলোতে বসানো হয়েছে বাঁশের খুঁটি। এছাড়াও এই এলাকায় ২’শ কেভি ট্যান্সারফারমার দেয়া হয়েছে। যেখানে ১’শটি মিটার চলার কথা সেখানে ওই ২’শ কেভি ট্যান্সফারমার দিয়ে ৩’শটি মিটারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় প্রতি নিয়ত লোড শোডিং হয়ে থাকে। এতে লো-ভোল্টোজের কারণে অনেক বাড়ি ফ্রিজ এসি, ইলেকট্রিকের দামী জিনিস পত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এলাকাটির ওই দুই ওয়ার্ডের ৫’শতাধিক পরিবারে বিদ্যুতের সংযোগের চাহিদা থাকলেও এভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় ঝুঁকির কথা বিবেচনায় অনেকেই সংযোগ নেননি। তাই ৩’শতাধিক বাড়িতে রয়েছে বিদ্যুতের সংযোগ। বছরের পর বছর বাকি পরিবারগুলো বঞ্চিত হয়ে চললেও খুঁটি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি ।
আশরাফুল ইসলাম, আব্দুর রশিদ, আনিছুর রহমান, ফরহাদ হোসেন, আইয়ুব আলী নামের কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, তাঁরা জানেন এভাবে বিদ্যুৎ নেওয়াটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ, তবু কিছু করার নেই। ঝুঁকি নিয়েই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে। আমরা চাই যে কোন দূর্ঘটনা ঘটার আগেই এই সংযোগ গুলোর নিরাপদ ব্যবস্থা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী-৩ আশরাফুল ইসলাম বলেন, সংযোগগুলো নানা সময় দেওয়া হয়েছে। এলাকার মানুষের তদবিরে সংযোগগুলো দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। তবে ঝুঁকিমুক্ত করতে তাঁরা ওই স্থানে দ্রুত খুটি বসাবেন।
জেএম/রাতদিন