বিত্তশালী দুজন নারী। সাজসজ্বা-পোষাকে পরিপাটি। দূরপাল্লার একটি বাসে রংপুর থেকে ঢাকা যাচ্ছেন তারা। বাসের সামনের দিকের দুটি আসনে তারা বেশ আরামে ভ্রমন করছেন। সাথে বছর দশেকের একটি মেয়ে শিশুও আছে। তবে শিশুটির জন্য নেয়া হয়নি কোনো আসন। তাকে বসানো হয়েছে ওই দুই নারীর পায়ের কাছে। সেখানেই জড়োসড়ো হয়ে বসেছে মলিন মুখের শিশুটি। মাঝে মধ্যে ঘুমের ঘোড়ে এক নারী শিশুটির গায়ের উপরই পা তুলে দিচ্ছেন। সম্ভবত শিশুটিকে গৃহপরিচারিকার কাজ করাতে রংপুর থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
চারটি ছবি দিয়ে বিষয়টি তুলে ধরেছেন টাঙ্গাইলের হাবিবুল্লাহ শেফুল নামের একজন। সোমবার, ৬ মে পোস্ট করা সেই স্যাট্যাস পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো :
‘কর্মস্থল ৬৫ কিলোমিটার
দূরে হওয়ায় প্রতিদিন আমাকে দূরপাল্লার বাসে যাতায়াত করতে হয়। আজ সকালে যখন বাসে উঠেছি
তখন ভালো কোন সিট না পেয়ে ড্রাইভারের পাশের সিটে সংকুচিত হয়ে বসেছিলাম। কিছুক্ষন পর
খেয়াল করলাম, বাসের সামনের সিটে দু জন মহিলা বসা, একজন মাঝ বয়সী আরেক জন উনার মা হবে
সম্ভবত।’
‘মাঝ বয়সী মহিলাটির চুলে কৃত্তিম লালচে রং করা হয়েছে। জামা পড়েছে কমলা রঙ্গের এবং কি পায়ের নখের কালার ও করেছে জামার সাথে ম্যাচ করে কমলা রঙ্গের ই। মহিলা দু জনের পোষাকে মনে হলো বেশ বিত্তশালী। পায়ের কাছে ব্যাগ রাখা, হটাৎ মনে হলো তাদের পায়ের কাছেই, বাসের ফ্লোরে কোন মেয়ে কুচিমুচি হয়ে ঘুমাচ্ছে। চোঁখে কি ভূল দেখলাম ভেবে জড়তা কাটিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখি সত্যিই দশ বারো বছরের একটা মেয়ে ধূলো মাখা ফ্লোরে ঘুমাচ্ছে।’
‘কন্ডাকটারকে জিজ্ঞেস করলাম, বাসটি কোথায় থেকে ছেড়ে এসেছে,,, সে বললো রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে এসেছে,,, তিনি আরো জানালেন, মেয়েটির জন্য কোন সিট নেয়া হয় নি, সারা রাস্তা সে এভাবেই বসে এসেছে। খেয়াল করলাম মহিলার মা মাঝে মাঝেই ঐ মেয়েটিরই কাঁধের উপর ঘুমের তালে পা উঠিয়ে দিচ্ছে।’
‘নির্বাকার হয়ে গেলাম, সকাল থেকেই এমন দৃশ্য দেখে কর্মস্থলেও মনযোগী হতে পারি নি,,, কলিজাটা বার বার কেঁদে উঠেছে মেয়েটিকে দেখে। শুধু বার বার মনে হচ্ছে,, জামার রঙ্গের সাথে ম্যাচ করে নখ কে কালার করতে পারেন অাবার যাকে ধুলো মাখা বাসের ফ্লোরে বসিয়ে নিয়ে যান,, তাকে দিয়ে ঘর পরিস্কার করা সহ তার হাতের রান্নাবান্না খেতে লজ্জা করে না???’
এবি/রাতদিন