রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তর থেকে অপরাধ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে রাজনৈতিক ব্যক্তি ছাড়াও সরকারি কর্মচারীসহ অন্য যে সব ব্যক্তি জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে ।
বুধবার,১৩ নভেম্বর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নোত্তর পর্বে এ সংক্রান্ত একাধিক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন ।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ যাতে কেউ করতে না পারে সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি কঠোর গোয়েন্দা নজরদারিও অব্যাহত রয়েছে।
সরকারি কর্মচারীসহ অপরাধী যেই হোক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে অনুসন্ধানপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্যাসিনো ও দুর্নীতির সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ যাতে কেউ করতে না পারে সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানের পাশাপাশি কঠোর গোয়েন্দা নজরদারিও অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে । দুর্নীতির বিষবৃক্ষ সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলে দেশের প্রকৃত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য একটি সুশাসনভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন ও ভারতের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে শহীদুজ্জামান সরকারের আরেক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে এ দুটি দেশের সঙ্গেই আমরা আলোচনা করেছি, রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, তারাও চেষ্টা করছে। শুধু ভারত বা চীনই নয়, মিয়ানমারের সঙ্গে যেসব দেশের স্থলসীমানা রয়েছে (ভারত-চীন-থাইল্যান্ড-লাওস) সেসব দেশের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটি দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত, এ ব্যাপারে সবাই একমত পোষণ করেছেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার রাজি হয়েছে এবং একটি চুক্তিও করেছে। কিন্তু একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে যে, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গারা দেশটিতে ফেরত যেতে চাচ্ছে না।
এটি এখন মিয়ানমার সরকারের ওপরই নির্ভর করছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া তাদের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) ফেরত যাওয়ার পর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নিরাপদ থাকবে সেই বিশ্বাসটি আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে সৃষ্টি করা তাদেরই (মিয়ানমার) দায়িত্ব।
মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতি বিরোধী অভিযান অর্থাৎ দুর্নীতির অনুসন্ধান, তদন্ত এবং প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তাছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তির সম্পদের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন দফতরে পত্র প্রেরণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে এরূপ অভিযান অব্যাহত রাখতে দুর্নীতি দমন কমিশন সর্বদাই বদ্ধপরিকর। তাছাড়া, বাংলাদেশের কোন কোন ব্যক্তি সিঙ্গাপুরে ক্যাসিনো খেলেছে, সে সম্পর্কিত তথ্য প্রেরণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন সিঙ্গাপুর সরকারকে অনুরোধ করেছে। সব দুর্নীতিবাজকে আইনের আওতায় আনতে দুর্নীতি দমন কমিশন কাজ করে যাচ্ছে।
মীর মোস্তাক আহমেদ রবির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দল মত নির্বিশেষে সকল ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে দুর্নীতিসহ সব ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সারাদেশে এ ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে দুর্নীতি ও অবৈধ অর্থসম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি এ সময় কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে আরও বলেন, দুর্নীতির সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া সমাজ থেকে সব ধরনের অপরাধ নির্মূল করার জন্য আইন প্রয়োগের পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং ও নানা ধরনের সভা-সেমিনারের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সর্বপ্রকার হয়রানির অবসানে আমরা বদ্ধপরিকর। সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্তর কমিয়ে এনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে বিধি-বিধান যথাসময়ে প্রতিপালন এবং জনগণের সেবক হিসেবে প্রশাসনকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা এবং আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে দুর্নীতির পরিধি ক্রমান্বয়ে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনারও পরিকল্পনা আমাদের সরকারের রয়েছে।
আনোয়ারুল আবেদীন খানের আরেক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যা যা করার তা করে যাচ্ছি, করে যাব। গত ১০-১১ বছর আগে দেশের কী অবস্থা ছিল একটু বিবেচনা করুন। আগে মানুষ এক বেলা খেতে পর্যন্ত খেতে পারত না। কিন্তু গত এক দশকে দেশের চেহারাই পাল্টে গেছে। সরকারের উন্নয়নের সুফল তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষ ভোগ করছে। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য আমার নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছি। দেশের মানুষের কল্যাণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রয়োজনে বাবার মতো আমার জীবনকে উৎসর্গ করব। (সূত্র: যুগান্তর)
এসকে/রাতদিন