আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী মশিউর রহমান মামুন নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
রোবাবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি হাতীবান্ধা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।
ইশতেহারে তিনি নির্বাচিত হলে উপজেলাবাসীর জন্য নানা উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। আগামী ১০ মার্চ নিজের ঘোড়া প্রতীকে ভোট কামনা করেছেন আ.লীগের বিদ্রোহী এ প্রার্থী।
ঘোষিত ইশতেহার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :
উপজেলা পরিষদ সেবাসমূহ :
১. হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের সকল অফিসে জনসাধারণের অবাধ গমন ও প্রাপ্য সেবাসমুহ প্রদানে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ।
২. উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে সরকার, দেশি/বিদেশি এনজিও বা সংস্থা জনগনকে আর্থিক বা অবকাঠামোগত সাহায্য করলে তা সম্পূর্ণ দূর্নীতিমুক্ত রাখা এবং জনগণের কাছে পৌঁছানো।
৩. সাধারণ মানুষের তথ্যের চাহিদা মেটাতে তথ্য সেন্টার চালুকরণ। যেখান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার দর, আইনজীবী, ডাক্তার, ক্লিনিক, হাসপাতাল, বিভিন্ন ধরণের যানবাহন চালক, শিক্ষকসহ সব পেশার মানুষের মোবাইল নম্বরসহ নানা তথ্য থাকবে। সাধারণ মানুষ তথ্য সেন্টারের হেল্প লাইনে ফোন করে সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্যসেবা নিতে পারবে।
উন্নয়ন ও মানোন্নয়ন (স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য, সড়ক, অবকাঠামো ও বিবিধ):
১. হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকার প্রদত্ত সকল সুবিধা জনগণকে সঠিকভাবে নিয়মানুযায়ী প্রদান করা হবে। হাসপাতালে ডাক্তারদের নিয়মিত উপস্থিতি, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা, গরীব রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য সর্বাত্বক সহায়তা ও বিনামূল্যে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
২. কৃষি খাতে সরকার, দেশি/বিদেশি এনজিও বা সংস্থা প্রদত্ত যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রকৃত কৃষকদের নিকট পৌঁছে দেয়া । খাদ্যশস্য/ কৃষিপণ্য উৎপাদনে কৃষকদের সীমিত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার সম্পর্কে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থকরণ এবং জৈব সার ব্যবহারে উপজেলার কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ ।
৩. হযরত শাহ গরীবুল্লাহ(রহ:) এতিমখানার শিক্ষার্থীদের সর্বাত্বক সুবিধা প্রদান । মাজার শরীফের পুরানো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে আধুনিক কমপ্লেক্সে রূপান্তর করা ও সংলগ্ন একটি মসজিদ নির্মাণ করা ।
৪. নির্বাচনী এলাকার যে সকল বাজারে পাবলিক টয়লেট নেই সেখানে পাবলিক টয়লেট স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থাকরণ।
৫. প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে একটি করে স্পোটিং ক্লাব গঠন করা । ইউনিয়নের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে ‘ইউনিয়ন দল’ গঠন করা এবং দলে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের সম্মানী ভাতার ব্যবস্থা করা । উপজেলা পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়মিতভাবে সবধরনের খেলার টুর্নামেন্ট আয়োজন করা ।
৬. দৈখাওয়ারোড থেকে দিঘীরহাট পর্যন্ত এবং পাশ্ববর্তী গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নাগরিক সুবিধার্থে সার্বক্ষণিক সরবারহের জন্য পৃথক বিদ্যুত লাইনের ব্যবস্থাকরণ। নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য এ এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং রাত্রিকালীন আলোর ব্যবস্থাকরণ।
৭. উপজেলার প্রত্যেকটি পাকা রাস্তায় নিরাপদে চলাচলের জন্য দু-পাশে মাটি ভরাট ও বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক নান্দনিক পরিবেশ তৈরি করা । বাজার/বন্দরে ভিতরের অংশে রাস্তা প্রসস্থকরণ ও জনসাধারণের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের জন্য আধুনিক শহরের আদলে ফুটপাত নির্মাণ ।
৮. গড্ডিমারী, সিংগীমারী, সিন্দুর্ণা, পারুলিয়া ইউনিয়নে তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রোধে বাঁধ নির্মাণ করতে সরকারকে উদ্বুদ্ধকরণ এবং বন্যার সময় স্থানীয়ভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ।
৯. ঐতিহ্যবাহী শালবন ও দোয়ানী তিস্তা ব্যারাজকে দর্শনার্থীদের জন্য মনোরম পরিবেশ নিশ্চিত ও বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা । হাতীবান্ধা অডিটোরিয়াম হল রুমে সাপ্তাহিক/মাসিক ছুটির দিনে উপজেলার নাগরিকদের জন্য নিয়মিতভাবে সুস্থ সাংস্কৃতিক বিনোদনের আয়োজন করা।
১০. কবরস্থান সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ধনী-গরীব সকলের সহযোগিতা এবং সরকারি অনুদান দিয়ে প্রত্যেক এলাকায় একটি করে সার্বজনীন কবরস্থান নির্মাণ করা যাতে একই জায়গায় এলাকার সকল মানুষ মৃত্যুর পরও পাশাপাশি থাকতে পারে।
১১. মেডিকেল মোড় থেকে বন্দর বাসস্ট্যান্ড বাইপাস (রেলগেট-কাজীরবাজার সংযোগ) সড়ক নির্মান। কাজীরবাজার লিডার্স ক্লাবের সামনে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বাজারের অভ্যান্তরে প্রবেশের জন্য একটি প্রশস্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ।
উন্নয়ন ও মানোন্নয়ন (শিক্ষা):
১. স্কুল ও কলেজের অনুষ্ঠানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে রাজনৈতিক/দলীয় বক্তব্য না রেখে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন, অনুষ্ঠান সম্পর্কিত ইতিহাস, ঐতিহ্য তুলে ধরার ব্যবস্থা এবং এক(১) ঘণ্টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করা ।
২. প্রতিটি স্কুল/কলেজে ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞানের মত জটিল বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের সহজে পাঠদানের জন্য উপজেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেধাবী শিক্ষর্থীদের দ্বারা সাপ্তাহিক ক্লাস/আলোচনার ব্যবস্থা করা। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পড়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধকরণ।
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সভাপতি পদে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষকে অগ্রাধিকার দেয়া । শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং নিয়মিত সভার আয়োজন করার মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়নের চেষ্টা।
আইনের শাসন:
১. জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা । বিশেষ করে সমাজ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ক্ষেত্রে আপোষহীন অবস্থান গ্রহণ এবং প্রয়োজনে ভুক্তভোগীকে সব ধরণের সহযোগিতা প্রদান।
২. দূর্নীতি, মাদক, জুয়া, ধর্ষণ, শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল ঔষুধ, চোরাচালানি, পর্নগ্রাফী, চুরি, খাদ্যে ভেজাল এবং ছিনতাই রোধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা।
এবি/রাতদিন