রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী নিয়ে চলছে নানা জল্পনা। নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দিতে নেতাকর্মীরা করছেন মিছিল-সমাবেশ বা শোডাউন।
এরই মধ্যে গতকাল শনিবার দলটি আট সদস্যের মনোনয়ন বোর্ড গঠন করে আজ রোববার থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করতে যাচ্ছে। এই অবস্থায় এরশাদ-রওশনপুত্র রাহগির আল মাহী সাদ দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন বলে একটি খবর প্রকাশ করেছে দৈনিক কালের কন্ঠ। পাঠকদের জন্য তা হুবুহু তুলে ধরা হলো :
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসন নিয়ে নতুন করে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। জাপার একটি সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে পারিবারিক সমঝোতায় এরশাদ-রওশনপুত্র রাহগির আল মাহী সাদকে রংপুর-৩ উপনির্বাচনে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও রংপুর-৩ আসনের জাতীয় পার্টির ১২ হাজার নেতাকর্মীসহ দল থেকে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও একাধিক কাউন্সিলর স্বাক্ষরিত একটি আবেদন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই আবেদনে তাঁরা দাবি জানিয়েছেন, রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে রংপুর মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিরকে দলীয় মনোনয়ন দিতে।
জাতীয় পার্টির একটি সূত্র জানায়, রংপুর-৩ আসনটি এরশাদের পরিবার নিজেদের মধ্যে রাখতে চায়। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মাদ কাদের ও বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে। উপনির্বাচনে প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পরিবারের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে চান বলে চাউর আছে। তাঁদের মধ্যে এরশাদের ভাইপো সাবেক এমপি আসিফ শহরিয়ার, জি এম কাদেরের স্ত্রী শরীফা কাদের, এরশাদের বোন ড. মেরিনার মেয়ে, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলুর স্ত্রী টুম্পা এবং এরশাদ-রওশনপুত্র সাদ। রওশন এরশাদ শুরু থেকে সাদ এরশাদকে প্রার্থী করার পক্ষে অনড় অবস্থান গ্রহণ করেন। তবে জি এম কাদের সাদকে প্রার্থী করার বিরোধী ছিলেন।
জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, সাদকে প্রার্থী করা হলে কেন্দ্রীয়ভাবে জি এম কাদের আরো সংহত হবেন এবং রওশনের সঙ্গে বিরোধ মিটে যাবে। তবে সংকট বাড়বে রংপুরে। ওই প্রেসিডিয়াম সদস্য আরো বলেন, এরশাদ পরিবার রংপুর-৩ আসনটি তাদের নিজেদের দখলে রাখতে চায়।
জাতীয় পার্টিতে দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ কোনো অবস্থানে না থাকা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ পার্টিতে রওশনপন্থী হিসেবে পরিচিত। জাপার একটি সূত্র জানায় ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের মধ্যে ওই সমঝোতার উদ্যোগ নেন। এরই মধ্যে তাঁদের একটি বৈঠকও হয়েছে।
জাপার একাধিক সূত্র জানায়, এরশাদের পরিবারের লোকেরা যেমন চান উপনির্বাচনে এরশাদের আসনটিতে তাঁদের পরিবারের কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোক, একইভাবে রংপুর বিভাগের দুজন কেন্দ্রীয় নেতাও চান এরশাদ পরিবারের বাইরে অন্য কেউ ওই অঞ্চল থেকে জনপ্রিয় নেতা না হয়ে উঠুক।
সূত্র মতে, ওই দুই কেন্দ্রীয় নেতা প্রকাশ্যে এস এম ইয়াসিরের পক্ষে থাকলেও গোপনে তাঁরা ইয়াসিরের বিরোধিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে একজন সাদ এরশাদের বিরোধী। তবে তিনি এরশাদের বোনের মেয়ে এবং জিয়াউদ্দিন বাবলুর স্ত্রীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন। ওই অঞ্চলের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা বর্তমানে নির্বাচিত একটি পদে আসীন। তিনিও গোপনে ইয়াসিরের বিরোধী।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর আসনটির যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখাশোনা করতেন এস এম ইয়াসির। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের অভিযোগ নেই। রংপুরে তিনি কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে পরিচিত। তাঁর জনপ্রিয়তার কারণেই রংপুর অঞ্চলের ওই দুই নেতা তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রভাব হারানোর ভয়ে ইয়াসিরবিরোধী।
এরশাদের ভাইপো সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ার এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, দলীয় মনোনয়ন না পেলেও তিনি নির্বাচন করবেন। অন্যদিকে এস এম ইয়াসিরকে মনোনয়ন না দেওয়া হলে রংপুরের নেতাকর্মীরা গণপদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারে। আবার ইয়াসিরও নির্দলীয় প্রার্থী হতে পারেন বলে জানিয়েছেন রংপুরের একাধিক নেতা। সাদ এরশাদ রংপুরে একেবারেই অপরিচিত মানুষ। সাদকে মনোনয়ন দেওয়া হলে রংপুরে জাতীয় পার্টিতে সংকট দেখা দেবে। যদিও এরশাদ পরিবারের একজন সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এরশাদের লাঙল প্রতীক যিনিই পাবেন, রংপুরের মানুষ তাঁকেই ভোট দেবে।’
এ বিষয়ে এস এম ইয়াসিরের সঙ্গে কথা বললে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রংপুরের মানুষই এরশাদের পরিবার। রংপুরের মানুষ এরশাদকে বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছে, দুর্দিনে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি কারাগারে যাওয়ার পরও রংপুরের মানুষ তাঁকে ভোট দিয়েছে। এখন শুনছি আত্মীয়র কথা, পরিবারের কথা।’ তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’
দলীয় মনোনয়ন না পেলে কি বিদ্রোহী হবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সময়েই বলে দেবে কী করব। সময় আসুক।’
রংপুরে সাদ এরশাদকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি একটি পরিবার। এখানে সবার সঙ্গেই আমার সমঝোতা আছে। রংপুর উপনির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করতে আমরা সংগঠনের রংপুর শাখার কাছে চারটি নাম চেয়ে পাঠাব। তাদের দেওয়া নামের তালিকা নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
একই ধরনের মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা রংপুর শাখার কাছে প্রার্থী তালিকা চাইব। সেখান থেকে বাছাই করে জনপ্রিয়তা দেখে প্রার্থী ঠিক করব। পার্টির সভায় সবার আলোচনার ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।’