কুড়িগ্রামের ডিসি-মাদকদ্রব্য কার্যালয়ের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য, সাংবাদিকদের প্রতিবাদ

কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে ‘মাদকবিরোধী অভিযানে’ আটক ও পরে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানের সময় মাদকসহ আরিফুল ইসলাম রিগানকে আটক করা হয় বলে দাবি করেছেন অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা। তবে আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার বলেছেন, ‘মধ্যরাতে বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে আরিফকে পেটানো, জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনো মাদক পাওয়া যায়নি।’

তবে এ ‘মাদকবিরোধী অভিযানের’ উদ্যোগ নিয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।

এ ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারের কাছে তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন চেয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার, ১৩ মার্চ রাত ১২টার দিকে আরিফকে কুড়িগ্রাম শহরের চড়ুয়াপাড়াস্থ বাড়ি থেকে আটকের পর সাজা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আরিফুল ইসলাম বাংলাট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।

অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার সাথে কথা বলেছে সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো। তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ, আনসার ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ অভিযানের সময় মাদকসহ আরিফুল ইসলাম রিগানকে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে তিনি দোষ স্বীকার করায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।’

তবে সাংবাদিক আরিফের স্ত্রী মোস্তারিমা বলেন, ‘কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন তাঁর নিজ নামে একটি পুকুর করেছিলেন। আরিফুল এ বিষয়ে রিপোর্ট করেছিলেন। এ ছাড়া সম্প্রতি একটি নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন।’ মূলত এসবের কারণেই আরিফুল ডিসির রোষানলে পড়েন বলে দাবি করেছেন আরিফের স্ত্রী।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কুড়িগ্রামের  জেলা প্রশাসক বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আমার একজন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের কয়েকজন ফোর্স, ব্যাটালিয়ন আনসারের পাঁচজন আর মাদকদ্রব্যের তিনজন ছিলেন। তাঁদের কাছে লিখিত অভিযোগ ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই অভিযান হয়।’

কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবু জাফর বলেন, ‘আমি এলাকায় ছিলেন না। আজ শনিবার দুপুরে কার্যালয়ের পরিদর্শক জাহিদ তাঁকে জানিয়েছেন, রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের অভিযানের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়।’

সাংবাদিকদের প্রতিবাদ:

এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন কুড়িগ্রামের স্থানীয় সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ। আজ শনিবার দুপুরে শহরের শাপলা চত্বরে এ মানববন্ধন করা হয়।

এতে বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বিপ্লব, সাংবাদিক রাজু মোস্তাফিজ, হুমায়ুন কবির সূর্য, ছানালাল বকসী ও শ্যামল ভৌমিক।

মানববন্ধন থেকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়। একই সঙ্গে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের মুক্তি চেয়েছেন তারা।

এবি/রাতদিন