চাকরিচ্যুতি ও পারিবারিক অশান্তির কারণে হামলা, রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের সাবেক ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলার ঘটনায় একমাত্র আসামি হিসাবে রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র(চার্যসীট) জমা দিয়েছে পুলিশ।

শনিবার, ২১ নভেম্বর দিনাজপুরের আমলী আদালত-৭ এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি ইমাম আবু জাফর।

তিনি জানান, সবদিক বিবেচনা করে প্রতীয়মান হয়েছে যে ঘটনার একমাত্র পরিকল্পনাকারী এবং হামলাকারী আসামি রবিউল ইসলাম। ফলে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, অভিযোগপত্রে এই মামলায় সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা, মোবাইল নেটওয়ার্ক, আলামত হিসেবে ব্যবহৃত লাঠি, হাতুড়ি, ফরেনসিক রিপোর্ট, এমই রিপোর্ট, নোকিয়া ফোন, নগদ ৪৫ হাজার টাকাসহ ৩১টি আলামত থাকার কথা বলা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে ৫৩ জনকে স্বাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫ জন স্বাক্ষী ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলায় প্রায় পৌনে ৩ মাসের সময়ে ৪০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রবিউল ইসলাম আইপিএল ক্রিকেট জুয়া, বাজি ধরা ও ক্রাইম পেট্রোল দেখার আসক্তিতে পড়ে যান। পরে এইসব নেশায় পরিণত হওয়ার ফলে কাজে মনোযোগ দিতে পারতেন না। কাজে অবহেলা ও উদাসীনতার জন্য তাকে শাস্তিস্বরূপ ঘোড়াঘাটে বদলী করা হয়। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় পাওনাদারদের চাপ সহ্য করতে না পারায় গত ৯ জানুয়ারি ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যাগ থেকে ১৬ হাজার টাকা চুরি করেন। পরে চাকরির কোনো ক্ষতি হবে না, এই শর্তে ৫০ হাজার টাকা দেন রবিউল। এরপরও ইউএনও রবিউলের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

আইপিএলসহ জুয়ায় অভ্যস্ত, বাজিধরা ও জুয়া খেলার কারণে আর্থিকভাবে ঋণগ্রস্ত হওয়া, ইউএনওর ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করার ফলে জরিমানা প্রদান, রবিউলের অপেশাদারিত্বের জন্য বিভাগীয় মামলাসহ সাময়িক বহিষ্কার করা এবং পরে তাকে চাকরিচ্যুত করা, পারিবারিকভাবে অশান্তির কারণে রবিউল এই হামলার ঘটনার পরিকল্পনা করেন।

অভিযোগপত্র দাখিল শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইমাম আবু জাফর বলেন, প্রায় আড়াই মাসে মামলার বিভিন্ন বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ২টার দিকে সরকারি ডাকবাংলাতে ঘোড়াঘাট ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী শেখের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় তাদেরকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে দুপুর ১টায় হেলিকপ্টার যোগে জাতীয় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় গত ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ভাই শেখ ফরিদ বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা করেন। ১১ সেপ্টেম্বর দায়িত্বে অবহেলা ও কাজে গাফিলতির অভিযোগে ঘোড়াঘাটের ওসি আমিরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়। এদিন রাতে জেলার বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের বিজোড়া গ্রামের খতিব উদ্দীনের ছেলে ও ঘোড়াঘাটের ইউএনও বাসভবনের সাবেক কর্মচারী রবিউল ইসলামকে আটক করা হয়।

আদালতের মাধ্যমে দুই দফায় রবিউলকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। অবশেষে ২০ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী আদালত-৭)-এর বিচারক ইসমাইল হোসেনের কাছে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন রবিউল।

এবি/রাতদিন