এরশাদ জীবিত থাকাকালেই জাতীয় পার্টির পদ বণ্টন ও অন্যান্য সিদ্ধান্ত নিয়ে জি এম কাদেরের সঙ্গে রওশনের দ্বন্দ্ব ছিল প্রকাশ্য। সম্প্রতি তার মৃত্যুর পর সেই দ্বন্দ্ব আবারো প্রকাশ্যে এলো। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর তার ভাই জি এম কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হলেও তা মানতে রাজি নন দলের জ্যেষ্ঠ কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ।
জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করার আগে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মতামত নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, জি এম কাদের এখনও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই আছেন।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতার প্যাডে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের নিয়ম তুলে ধরে ওই দাবি করেছেন এরশাদপত্নী রওশন।
এরশাদের ‘ইচ্ছায়’ পার্টির নেতৃত্ব পাওয়া জি এম কাদের বলেছেন, রওশন এরশাদের ওই ‘চিঠি’ তিনি দেখেছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
অসুস্থ থাকা অবস্থায় এরশাদ গত এপ্রিলে তার ভাই জিএম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন। এর পর থেকে রওশন ও তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছিল না।
গত ১৪ জুলাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ।
তার চার দিনের মাথায় এক সংবাদ সম্মেলনে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের নাম ঘোষণা করা হয়। এরশাদের স্ত্রী রওশন ওই সংবাদ সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন না।
দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ সেদিন ওই ঘোষণা দিয়ে বলেন, মৃত্যুর আগে এরশাদই এ সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন।
এরপর গত শনিবার এরশাদের বড় ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে গুলশান-২ নম্বরে ভাবি রওশনের বাসায় যান জি এম কাদের।
রওশন সেদিন পার্টির নতুন চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে আশির্বাদ করেন বলে দলের প্রেস সচিব সুনীল শুভ রায় সাংবাদিকদের জানান।
কিন্তু দুই দিনের মাথায় রওশনের স্বাক্ষরে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় উল্টো কথা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ‘সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মারফত জানতে পেরেছি, জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা আদৌ কোনো যথাযথ ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। আশা করি বর্তমানে যিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী চেয়ারম্যান না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন ‘
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পার্টির ‘অনেক সিনিয়ার নেতা’ রওশনের ওই বক্তব্যের সঙ্গে একমত। তাদের মধ্যে সাতজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দুইজন এমপির নামও ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যুক্ত করা হয়েছে।
এরা হলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংসদ ফখরুল ইমাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংসদ সেলিম ওসমান, সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংসদ নাসরিন জাহান রত্না, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংসদ মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী, সাংসদ রওশন আরা মান্নান, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।
মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই সকালে হাতে লেখা চিঠি রওশন এরশাদের বলে সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রওশনপন্থী নেতা মীর আব্দুস সবুর আসুদ।
জেএম/রাতদিন