ট্রাম্পের কাছে নালিশ: ভিডিওতে ব্যাখা দিলেন প্রিয়া সাহা

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে নালিশ করে আলোচিত বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা তার অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।

নিজের পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ‘শারি’ এর ইউটিউব চ্যানেলে রবিবার পোস্ট করা ৩৫ মিনিটের একটি ভিডিও বার্তায় প্রিয়া সংখ্যালঘুরা দেশ থেকে ‘ডিসঅ্যাপিয়ার’ হয়ে যাচ্ছে বলতে কি বোঝাতে চেয়েছেন তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। 

ভিডিও বার্তায় প্রশ্নকারী ‘ডিসঅ্যাপিয়ার’ বলতে ‘নিখোঁজ’, ‘গুম’, ‘হারিয়ে গেছে’ ইত্যাদি যেসব প্রতিশব্দ রয়েছে তার মধ্যে ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন জানতে চাইলে প্রিয়া সাহা বলেন-

‘আসলে আপনি তো জানেন, আমরা তো বাংলা ভাষায় কথা বলি, শব্দের প্রতিটা বিষয় যে আমরা অবগত তা নই। আমি যেটা বোঝাতে চেয়েছি- যে এই পরিমাণে লোক থাকার কথা ছিল। যদি স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে প্রক্রিয়া, যেভাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই একইভাবে যদি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যদি ২৯.৭% থাকত তাহলে ওই জনসংখ্যাটা হতো, কিন্তু তারা নাই। এখন এই যে তারা নাই, এইটা যে ক্রমাগতভাবে কমে গেছে, তারা নাই কেন?- এটাই আমি বোঝাতে চেয়েছি।’

বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ প্রায় ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার তথ্য কোথা থেকে পেয়েছেন জানতে চাইলে প্রিয়া সাহা বলেন-

‘বাংলাদেশের পরিসংখ্যান বই রয়েছে, ২০০১ সালের পরিসংখ্যান বইয়ের ধর্মীয় সংখ্যালঘু চ্যাপটার আছে, সেখানে এই বিষয়গুলো আছে। প্রতিবছর সরকার যে সেন্সাস রিপোর্ট বের করে সেই রিপোর্ট অনুসারে দেশভাগের সময় দেশে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা ছিল ২৯.৭% আর এখন সংখ্যালঘু জনসংখ্যা হচ্ছে ৯.৭% ভাগ। এখন দেশের মোট জনসংখ্যা ১৮০ মিলিয়নের মতো। তো সে ক্ষেত্রে যদি বাংলাদেশের জনসংখ্যা যদি একইভাবে বৃদ্ধি পেত, তাহলে অবশ্যই, যে জনসংখ্যা আছে এবং যে জনসংখ্যার কথা আমি বলেছি যে, ক্রমাগতভাবে হারিয়ে গেছে, সেখানে আমার তথ্যটা মিলে যা’।

পরিসংখ্যানে মিলছে না বলেই এই কথা বলছেন না কি অন্য কোনো তথ্য আছে জানতে চাইলে প্রিয়া সাহা বলেন-

‘অন্য তথ্য তো অবশ্যই আছে, আপনারা জানেন অধ্যাপক আবুল বারকাত এই পরিসংখ্যান বইয়ের ওপর ভিত্তি করেই গবেষণা করেছেন। এবং সেই গবেষণায় উনি দেখিয়েছেন যে- বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ৬৩২ জন লোক হারিয়ে যাচ্ছে। এবং কী পরিমাণে ক্রমাগত লোক হ্রাস পেয়েছে। পরিসংখ্যান বই নিয়ে ২০১১ সালে আমি স্যারের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছি। যার কারণে বিষয়টা সম্পর্কে আমি অবহিত’।

এক প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, আমি ভালো নেই। আমার পরিবার ভীষণ সমস্যায় আছে।

প্রিয়া সাহা বলেন, ‘২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, সেটা সকলেই জানেন। আর আমার নিজ গ্রামে ২০০৪ সালে ৪০টি হিন্দু পরিবার থাকলেও এখন সেই সংখ্যা মাত্র ১৩টি।’

তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আমন্ত্রণে আমি এখানে এসেছি। যুক্তরাষ্ট্র সরকার থেকে আয়োজিত মন্ত্রী পর্যায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও যোগ দেওয়ার উদ্দেশে আমি এখানে আসি। আমি হঠাৎ করেই এখানে আসি। সে কারণে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা সেটা জানেন না। ঐক্য পরিষদের নেতা রাণা দাশগুপ্ত বা বাদলদা এখানে আসার কথা জানতেন না।’

এ ছাড়া এর আগেও একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন বলে ভিডিও বার্তায় জানান প্রিয়া সাহা।

বুধবার হোয়াইট হাউসে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার দেওয়া বক্তব্যকে ঘিরে তোলপাড় চলছে।

সেখানে আমন্ত্রিত চীন, তুরস্ক, উত্তর কোরিয়া, মিয়ানমারসহ ১৬টি দেশে সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের শিকার একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলছিলেন ট্রাম্প।

এ সময় প্রিয়া সাহা নামের এক নারী নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে বলেন, “স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানকার ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেছে। দয়া করে বাংলাদেশি জনগণকে সাহায্য করুন। আমরা দেশ ছাড়তে চাই না, থাকতে চাই।”

ট্রাম্প তখন বলেন, “বাংলাদেশ?” জবাবে হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে ওই বাংলাদেশি নারী আরও বলেন, “এখনো সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ থাকে। আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা দেশ ছাড়তে চাই না। সেখানে থাকতে আমাদের সহযোগিতা করুন। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার জমি ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি।”

তখন ট্রাম্প জিজ্ঞাসা করেন, “কে জমি নিয়ে গেছে?” উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, “মুসলিম মৌলবাদী সংগঠনগুলো। তারা সবসময় রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে আসছে।”

পরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এবিসি নিউজের একটি ভিডিওতে প্রিয়া সাহার কথোপকথনের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে এ নিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন মহলে নানা ধরনের সমালোচনা-আলোচনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ভিডিওকে কেন্দ্র করে নানা মন্তব্য করেন অনেকেই।