তিস্তা-ধরলা তীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত, পরিস্থিতির অবনতি

অব্যাহত ভারী বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাট, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নদী তীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। তলিয়ে গেছে বাড়ীঘর।

রংপুরের গংগাচড়ায় ৫ ইউনিয়ন প্লাবিত

তিস্তা নদীর তীরবর্তী রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে। ইউনিয়নগুলো হলো আলমবিদিতর, লক্ষ্মীটারি, কোলকোন্দ, নোহালী ও গজঘণ্টা।

লক্ষ্মীটারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী বলেন, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, উত্তর চিলাখাল, সাউথপাড়া ও মটুকপুর গ্রামের কমপক্ষে ৪০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী ২৮০টি পরিবারকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। পানিবন্দী মানুষের তালিকা করা হচ্ছে।

গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, মহিষাসুর, রমাকান্ত, আলালচর ও জয়দেব এলাকায় প্রায় ২০০ পরিবার এবং নোহালী ও আলমবিদিতর ইউনিয়নে ২৫০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

লালমনিরহাটে ৬ হাজার পরিবার পানিবন্দী

লালমনিরহাটে গতকাল শুক্রবার রাত নয়টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং সন্ধ্যা ছয়টায় ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার পরিবারের ২৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে সরকারি হিসাবে বলা হয়েছে। একটি এলাকায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে।

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদী পাড়ের লোকজনকে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে শুক্রবার রাত ১০টা থেকে দোয়ানী ও আশপাশের এলাকায় মাইকিং করতে দেখা গেছে।

বাড়িঘরের পাশাপাশি ১৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণার মতো পরিস্থিতি হয়নি।

জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ১১০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ অর্থ সহায়তা হিসেবে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

নীলফামারীতে ১৫ চরাঞ্চল প্লাবিত

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী ও গয়াবাড়ি এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের ১৫টি চরাঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন।

ধরলার পানি বৃদ্ধি, ভেঙ্গেছে সড়ক

কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানিতে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ছে। গতকাল শুক্রবার বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদ চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়ছেন ৩০ হাজার মানুষ।

রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র–তীরবর্তী বাগুয়ার চর এলাকায় ৩০০ মিটার পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। বাগুয়ারচর, বাইটকামারী, খনজমারা, বাইশপাড়া, ঝুনকিরচর, ঝিগনিকান্দা, তিনতেলীচরসহ প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। ইতিমধ্যেই ৫৫টি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপঙ্কর রায় বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত পরিবারগুলোকে ঢেউটিন, খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।

পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বেড়িবাঁধ ও বাগুয়ারচর, বাইটকামারী গ্রাম রক্ষায় দুই কিলোমিটারে জিও ব্যাগ দিয়ে তীর সংরক্ষণের প্রস্তাব করেছিলাম। বরাদ্দ পেয়েছিলাম ২৮০ মিটারের। তাই দিয়ে কাজ করা হয়েছে।’

কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ  না পাওয়ায় কাজ করা যায়নি। তবে বাঁধটি রক্ষায় এক হাজার বালুর বস্তা ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জেএম/রাতদিন