ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় ১৬ আসামির প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার সকালে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন।
এ মামলায় ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এর ভিত্তিতে স্কেচম্যাপ ও ফ্লোচার্টের মাধ্যমে এ হত্যায় কার কী ভূমিকা ছিল, তা আদালতের কাছে তুলে ধরা হয় বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, স্থানীয় কাউন্সিলর মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, অধ্যক্ষের শ্যালিকার মেয়ে উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মহিউদ্দিন শাকিল এবং সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন।
হত্যায় কার কী ভূমিকা: ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শামীম, নূর উদ্দিন, আবদুল কাদের মাদ্রাসার সামনে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্যরা সকাল ৮টা থেকে ৯টা ২০ মিনিটের মধ্যে যার যার অবস্থানে চলে যায়। শামীমের পলিথিনে নিয়ে আসা কেরোসিন তেল ও অধ্যক্ষের সামনের কক্ষ থেকে একটি কাচের গ্লাস নিয়ে ছাদের বাথরুমের পাশে রেখে দেয়। কামরুন্নাহার মনির কেনা দুটি ও বাড়ি থেকে আনা একটিসহ মোট তিনটি বোরকা ও চার জোড়া হাতমোজা সাইক্লোন শেল্টারের তিনতলায় নিয়ে রাখা হয়। শামীম, জাবেদ ও জোবায়ের সাড়ে ৯টার দিকে বোরকা ও হাতমোজা পরিহিত অবস্থায় তৃতীয় তলায় অবস্থান নেয়।
নুসরাত পরীক্ষা দিতে গেলে পপি নুসরাতকে জানায়, তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদে মারধর করা হচ্ছে। এর পর নুসরাত দৌড়ে ছাদে যেতে থাকে। নুসরাত সেখানে পৌঁছলে পপি নুসরাতকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে বলে। নুসরাত মামলা তুলবে না জানালে পপির সঙ্গে ছাদে উঠতে থাকলে কামরুন্নাহার মনি, শামীম, জোবায়ের ও জাবেদ তাদের পেছনে পেছনে সেখানে যায়। সেখানে নুসরাতকে মামলা তুলে নিতে হুমকি প্রদান করে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে। তিনি মামলা তুলতে রাজি না হওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়। এরপর শামীম বাঁ হাত দিয়ে নুসরাতের মুখ চেপে ধরে এবং ডান হাত দিয়ে নুসরাতের হাত পেছন দিকে নিয়ে আসে।
পপি নুসরাতের গায়ের ওড়না খুলে জোবায়েরকে দিলে জোবায়ের ওড়না দু’ভাগ করে ফেলে। ওড়নার এক অংশ দিয়ে পপি ও মনি নুসরাতের হাত পেছনে বেঁধে ফেলে; অন্য অংশ দিয়ে জোবায়ের নুসরাতের পা পেঁচিয়ে ফেলে। আসামি জাবেদ পায়ে গিঁট দেয়। সবাই মিলে নুসরাতকে ছাদের ফ্লোরে ফেলে দেয়। শামীম নুসরাতের মুখ ও গলা চেপে রাখে। মনি নুসরাতের বুকের ওপর চাপ দিয়ে ধরে এবং পপি ও জোবায়ের পা চেপে ধরে। জাবেদ পাশের বাথরুমে লুকানো কেরোসিনের পলিথিন থেকে কাচের গ্লাসে কেরোসিন নিয়ে নুসরাতের পুরো গায়ে ঢেলে দেয়।
শাহাদাতের ইশারায় জোবায়ের ম্যাচ দিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। মহিউদ্দীন শাকিল ও মোহাম্মদ শামীম সাইক্লোন শেল্টারের দুই সিঁড়ির সামনে পাহারারত ছিল। মাদ্রাসার মূল গেটের পাশে ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, আবদুর রহিম শরীফ ও হাফেজ আবদুল কাদের পাহারায় ছিল। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার পর আসামিরা নিরাপদ স্থানে সরে গিয়ে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে বিভিন্নভাবে প্রচার চালায়।
এন এ/রাতদিন