পুলিশের নামে মামলা করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন লালমনিরহাটের বিধবা

আমিনুর রহমান নামে এক পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে মামলা করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভুল্লী বেওয়া (৭০) নামে এক বিধবা। এ ঘটনায় শনিবার (৫ জুন) লালমনিরহাট সদর থানায় একটি জিডি করেছেন ভুল্লী বেওয়ার ছেলে ভোলা মিয়া। অভিযুক্ত কনস্টেবল কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইন্সে কর্মরত।

ভুল্লী বেওয়া সদর উপজেলার হারাটী ইউনিয়নের ঢাকনাই কুড়ারপাড় গ্রামের মৃত ছানে মামুদের স্ত্রী।

মামলা ও জিডি সূত্রে জানা যায়, স্বামীর রেখে যাওয়া আড়াই শতাংশ জমির ওপর সরকারিভাবে দেয়া আধাপাকা ঘরে বসবাস করেন বিধবা ভুল্লী বেওয়া। দুই ছেলে তাদের পরিবার নিয়ে রাজধানীতে থাকেন। ছেলেরা ঢাকায় রিকশা চালান। সেখান থেকে ছেলেদের পাঠানো টাকা আর সরকারিভাবে পাওয়া বিধবা ভাতায় চলে তার সংসার।

পাশাপাশি বাড়ির পাশে সরকারি কুড়ায় (বিল) কয়েকটি হাঁস পালন করেন তিনি। দুই বছর আগে সেই কুড়া জবর দখল করতে কুড়ায় বিষ দিয়ে সেই হাঁসগুলো মেরে ফেলেন প্রতিবেশী আকবর আলীর ছেলে কনস্টেবল আমিনুর রহমান ও তার লোকজন। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে পুলিশ সদস্যসহ তার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ভুল্লী বেওয়া। কিন্তু রহস্যজনক কারণে অভিযোগটি নথিভুক্ত হয়নি। তবে মামলা করতে গিয়ে কপাল পুড়েছে ভুল্লী বেওয়ার।

থানায় অভিযোগ দায়ের করায় ভুল্লী বেওয়ার পক্ষে সাক্ষী দেয়া জুয়েল সরকারের ঘর-বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এতেও শেষ হয়নি ক্ষিপ্ততা, বলে জানান ভুল্লী বেওয়া।

তিনি অভিযোগ করেন, এ ঘটনার পর পুলিশ সদস্য আমিনুর রহমান গত ১ জানুয়ারি বাড়িতে এসে ভুল্লী বেওয়ার সরকারি ঘরটি ভেঙে পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় তিনি ঘটনাস্থলের ভিডিওসহ সদর থানায় একটি মামলা (জিআর-১২৬/২১) দায়ের করেছেন। এ মামলায় পুলিশ সদস্য আমিনুরকে প্রধান আসামি করা হয়। কিন্তু আজও তার বিচার হয়নি।

অপরদিকে, এ ঘটনার পর পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দ্রুত তুলে নিতে ভুল্লী বেওয়া ও তার ছেলেদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। অব্যাহত হুমকির ভয়ে রাতে অন্যের বাড়িতে থাকছেন তিনি। মায়ের পালিয়ে বেড়ানোর খবরে রিকশাচালক ছেলে ভোলা মিয়া বাড়িতে এলে তাকেও হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় মা ও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে শনিবার (৫ জুন) লালমনিরহাট সদর থানায় জিডি (নং-২৫২) দায়ের করেছেন ভোলা মিয়া।

ভুল্লী বেওয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইন্সে কর্মরত কনস্টেবল আমিনুর রহমানের নামে মামলা দেয়ার পর থেকে বাড়িতে রাত কাটাতে পারি না। মামলা তুলে না নিলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমাকে দেখতে আসা ছেলেকেও মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইন্সে কর্মরত কনস্টেবল আমিনুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। কথা বলা যায়নি তার পরিবারের কারও সঙ্গে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইন্সের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক(এসআই) রাসেল সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ আলম বলেন, বিধবা ভুল্লী বেওয়ার মামলার বিষয়টি অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল আমিনুরের কর্মস্থলে পাঠিয়েছি। তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। বিধবা ও তার ছেলেকে হুমকির বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।

এনএ/রাতদিন

মতামত দিন