লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌর শহরের কলেজ পাড়া। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সেখানকার একটি বাড়িতে মানুষের আনাগোনা। আর শুক্রবার, ২৯ মার্চ সকাল থেকেই সেখানে বাড়তে থাকে মানুষের ভীড়। নানা বয়স-পেশার নারী-পুরুষ। সকলেই শোকাচ্ছন্ন। সেই শোক ছড়িয়ে পড়ে পুরো উপজেলাজুড়ে। সবার অপেক্ষা আনজির সিদ্দিকী আবিরের বাড়ি ফেরার।
দিন শেষে বিকাল পৌণে চারটা। বাড়ি পৌঁছে আবির। নিথর হয়ে, অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে। সাথে সাথেই পড়ে যায় কান্নার রোল। পরিবার, স্বজন থেকে শুরু করে চেনা-অচেনা সকলেরই চোখ গড়িয়ে পড়তে থাকে পানি। এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। যেন কেউই মেনে নিতে পারছেন না হাস্যজ্বল আবিরের অকাল মৃত্যু।
বাদ আছর পাটগ্রাম সরকারি জসমুদ্দিন আব্দুল গণি কলেজে মাঠে অনুষ্ঠিত হয় নিহত আবিরের নামাজে জানাজা। সেখানেও আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন হাজারো মানুষ। পুরো মাঠ যেন মানুষে পূর্ণ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জানাজা অংশ নিতে রেকর্ড পরিমাণ মানুষ এসেছিলেন। জানাজায় পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল ও পৌর মেয়র শমসের আলী উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে কলেজ পাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে আবিরের মরদেহ দাফন করা হয়।
বনানী অগ্নিকান্ডে নিহত রংপুরের ৪.. পড়ুন এখানে
নিহতের চাচা ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমন মোস্তা জানান, আবিরের মা স্কুল শিক্ষক তাসরিমা খানম মাত্র দুদিন আগে গ্রামের বাড়ি থেকে বেড়াতে গিয়েছিলেন ঢাকায়। উঠেছিলেন বড় ছেলে তানজির সিদ্দিকী তমালের বাসায়(২৬)। মাকে কাছে পেয়ে তাই একটু বেশিই খুশি ছিলেন আবির। বৃহস্পতিবার সকালে মায়ের হাতে ভাত খেয়ে শেষবারের মতো অফিস গিয়েছিল আবির। এরপর আর পরিবারের কারো সাথে কথা হয়নি তার।
তিনি জানান, বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাঁর খোজ নেয়ার চেষ্টা করছিলেন। তবে আবিরের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল । সারাদিন খোঁজাখুজির পর শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে আবিরের মারা যাওয়ার খবর পায় পরিবার।
আবিরের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে জানা যায়, সে মিকা সিকিউরিটিজ লিমিটেড নামের একটি শেয়ারবাজার লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী হিসাবে কর্মরত ছিলেন। এফ আর টাওয়ারের ১৬ তলায় প্রতিষ্ঠানটির অফিস।
ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উদ্ধৃতি দিয়ে আবিরের চাচা আরও জানিয়েছেন, অগ্নিকান্ড শুরুর পর ওই প্রতিষ্ঠানে থাকা ১৯ কর্মীর সকলেই বাইরে বেরিয়ে আসলেও আটকা পড়েছিলেন আবির। এই অবস্থায় তার এক সহকর্মীকে ফোন করে তাকে উদ্ধারের আকুঁতি জানিয়েছিলন। এসময় ওই সহকর্মী আবিরকে অফিস থেকে বেরিয়ে উপরের দিকে চলে যেতে বলেন। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ধারণা করা হচ্ছে, ধোঁয়ার কারণে উপরে যেতে না পেরে নিচের দিকে নামতে থাকেন আবির। শেষ পর্যন্ত ১৩ তলায় এসে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে মারা যান তিনি।
নিহত আনজির সিদ্দিকী আবির পাটগ্রাম পৌরশহরের কলেজপাড়ার বাসীন্দা পাথর ব্যবসায়ী ও আ.লীগ নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক বাচ্চুর ছেলে। তার মা তাসরিমা খানম পাটগ্রাম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আবির ২০০৯ সালে পাটগ্রাম টিএন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হয় ঢাকার সেন্ট যোশেফ কলেজে সেখানে থেকে এইচএসসি পাশ করার পর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদল্যায় থেকে বিবিএ শেষ করে যোগ দেয় মিকা সিকিউরিটিজে।
জানা গেছে, নিহত আবির সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিলেন গত ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে। তিনি এসময় তার চাচাতো ভাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন লিপুর হয়ে নির্বাচন করতে বাড়িতে এসেছিলেন।