রংপুরের ৫ মন্ত্রী : বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন তাদের

ছবি : রাতদিন.নিউজ
0

দেশের উত্তরাঞ্চলীয় বিভাগ রংপুর। এ বিভাগের আট জেলায় এবার মন্ত্রীত্ব পেলেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে তিনজনেই মন্ত্রী। দুইজন প্রতিমন্ত্রী।

দশম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে খাদ্য ও পরে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন নুরুজ্জামান আহমেদ। এবার তিনি পদোন্নতি পেয়ে হলেন একই মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী।

দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের একজন টিপু মুনশি প্রথমবারের মতো মন্ত্রীত্ব পেয়ে হলেন বাণিজ্য মন্ত্রী।

মন্ত্রীসভায় নুরুল ইসলাম সুজন নেতৃত্ব দিবেন রেলপথ মন্ত্রনালয়ের।

আর খালিদ মাহমুদ চৌধুরী রংপুর বিভাগ থেকে হলেন নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং মো. জাকির হোসেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী।

আট জেলায় এই পাঁচ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে পেয়ে তিস্তা, ধরলা, করতোয়া বিধৌত এ অঞ্চলের মানুষ তাই বেশ খুশি। দুপুরের পর থেকে মন্ত্রীসভায় আমন্ত্রণ পাওয়াদের নাম টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসতে শুরু করার পর থেকেই বিভিন্ন জেলায় শুরু হয় আনন্দ-উল্লাস। তাদের ভক্ত-সমর্থকরা নেমে আসেন রাস্তায়। চলে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ।

আনন্দের এ বন্যার খবর পাওয়া গেছে রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন এলাকাসহ রংপুর বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে।  

নুরুজ্জামান আহমেদ : বাবার হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন নুরুজ্জামান আহমেদ। তাঁর বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিরাম গ্রামে। কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলা নিয়ে গঠিত লালমনিরহাট-২ আসন থেকে তিনি সদ্য সমাপ্ত একাদশ সংসদ নির্বাচনে মহোজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। এর আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদে এ আসন থেকে বিজয়ী হয়ে প্রথমে খাদ্য প্রতিমন্ত্রী হন। পরে তাঁকে সেখান থেকে দেয়া হয় সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। আর এবার তিনি পেলেন একই মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব। গত ৪০ বছরের ইতিহাসে এ আসন থেকে নুরুজ্জামান আহমেদই পরপর দু’বার মন্ত্রী হলেন।

নুরুজ্জামান আহমেদ

কালীগঞ্জের তুষভাণ্ডার আরএমএমপি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে তিনি এসএসসি এবং ১৯৬৭ ও ১৯৬৯ সালে কারমাইকেল কলেজ থেকে যথাক্রমে এইচএসসি ও বিকম পাস করেন। তাঁর বাবা প্রয়াত করিম উদ্দিন আহমেদ ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে ছিলেন আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য। নুরুজ্জামান আহমেদ একাধিকবার কালীগঞ্জের তুষভান্ডার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। দু’বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে দু’বারই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

গত ৪০ বছরের ইতিহাসে এ আসন থেকে নুরুজ্জামান আহমেদই পরপর দু’বার মন্ত্রী হলেন

টিপু মুনশি : রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসন থেকে একাদশ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক  টিপু মুনশি ২০১৪ সালে নির্বাচিত হয়ে পেয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব। আর এবার হলেন বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী।

টিপু মুনশি

তিনি পীরগাছা উপজেলার গুয়াবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম রমজান আলী মুনশি। পেশায় পোশাক শিল্পের ব্যবসার সাথে জড়িত।

২০০৮ সাল থেকে রংপুর জেলা পূর্ণ মন্ত্রী বঞ্চিত। সেই অভাব এবার দূর হলো টিপু মুনশিকে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে।

নূরুল ইসলাম সুজন : একাদশ সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-২ (বোদা-দেবীগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। একই আসন থেকে এর আগেও দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন। এবার নির্বাচিত হয়ে তিনি হলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী।

নূরুল ইসলাম সুজন

তাঁর বড়ভাই প্রয়াত অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম পঞ্চগড়-২ আসন থেকে একাধিককবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর নূরুল ইসলাম সুজন ২০০১ সালে পঞ্চগড়-২ আসনের নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। পরবর্তিতে ২০০৮ সালে ওই আসন থেকে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হয়েছিলেন একই আসন থেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় নূরুল ইসলাম সুজন ডাকসুর বিজ্ঞান মিলনায়তন সম্পাদক ও সিনেট সদস্য ছিলেন। ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক।  পেশায় আইনজীবী এ রাজনীতিক সুপ্রীম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের হত্যাকান্ড মামলার একজন আইনজীবীও ছিলেন নূরুল ইসলাম সুজন।


একই আসন থেকে এর আগেও দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন অ্যাডভোকেট সুজন

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের জন্য বঙ্গভবন থেকে ডাক পেয়েছেন। তাঁকে দেয়া হয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী

দিনাজপুর-২ (বোচাগঞ্জ-বিরল) আসন থেকে পরপর তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য তিনি । বি.কম ডিগ্রিধারী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাবেক ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী প্রয়াত আব্দুর রউফ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে। ১৯৭০ সালের ৩১ জানুয়ারি দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ধততলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাবেক ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী প্রয়াত আব্দুর রউফ চৌধুরীর ছেলে।

মো. জাকির হোসেন : কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারী) আসন থেকে নির্বাচিত জাকির হোসেন পেয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। গত ২৮ বছরে এ জেলা থেকে তিনিই প্রথম মন্ত্রীত্ব পেলেন বলে জানা যাচ্ছে।

মো. জাকির হোসেন

ছাত্রলীগ রাজনীতি থেকে উঠে আসা জাকির হোসেন ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে  সাংসদ নির্বাচিত হন। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পাটির (জেপি) রুহুল আমিনের কাছে পরাজিত হন। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় ওই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

রৌমারী উপজেলা সদরের বাসিন্দা জাকির হোসেনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা শামছুল হক।

জাকির হোসেন ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে  সাংসদ নির্বাচিত হন।

এইচএ/০৬.০১.১৯

মতামত দিন