রংপুরে মারাত্মক বিদ্যুৎ বিপর্যয়, দুর্ভোগের শেষ কবে জানেনা কর্তৃপক্ষ

বড় ধরনের বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে রংপুর বিদ্যুৎ বিভাগ। একদিকে বড়পুকুরিয়া থেকে সরবরাহ কম পাওয়া অন্যদিকে লালবাগ উপকেন্দ্রের একটি ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়ায় এই বিপর্যয় বলে জানিয়েছে বিতরণ কর্তৃপক্ষ নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)।

গেল এক সপ্তাহ ধরে অব্যাহত লোডশেডিং আর তীব্র গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে নগরবাসীর। প্রতিদিন ঘনঘন লোডশেডিং সঙ্গে লো-ভোল্টেজ বিড়ম্বনায় নষ্ট হচ্ছে বৈদ্যুতিক সামগ্রী। ব্যহত হচ্ছে ছোট ও মাঝারি শিল্প কলকারখানার উৎপাদন।

যদিও বিদ্যুৎ বিভাগ এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু গেল এক সপ্তাহেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং একই অবস্থা রংপুর নগরের বাহিরের উপজেলাগুলোতেও। একবার বিদ্যুৎ গেলে তার দেখা যেন আর সহজে মিলছে না।

গতকাল রোববার, ২০ সেপ্টেম্বর ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত রংপুর নগরের বিভিন্ন এলাকায় এক থেকে আড়াই ঘণ্টা ধরে বিদ্যুতের দেখা মেলেনি। একই চিত্র ছিল আগের দিনও। সন্ধ্যা হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকছে নগরবাসী। এভাবেই একদিন দুদিন করে গেল সাতদিন ধরে দিনে রাতে অন্তত ১০ থেকে ১২ বার চলছে লোডশেডিং।

স্থানীয় লোকজন জানান, দীর্ঘদিন সমস্যা থাকলেও এক সপ্তাহের বেশি দিন ধরে বিদ্যুতের লুকোচুরি চরমে উঠেছে।

শনিবার সকাল থেকে রংপুর নগরে মাইকিং করে বিদ্যুৎ বিড়ম্বনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)। তাদের দাবি, বড়পুকুরিয়াসহ এই অঞ্চলের উৎপাদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। চাহিদার ৮৫০ মেগাওয়াটের মধ্যে ২’শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে।

তবে কবে নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতি হবে তার সঠিক উত্তর মিলছে না কারো কাছ থেকে।

লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজ নিয়ে নেসকোর দেয়া ব্যাখ্যায় অসন্তুষ্ট নগরবাসী। তারা বলছেন, গড়ে প্রতিদিন ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের অভাবে এমন পরিস্থিতি হতে পারে না। আগে এর চেয়ে বেশি ঘাটতি থাকলেও মানুষের দুর্ভোগ ছিল কম।

হঠাৎ কেন এমন বিদ্যুৎ বিপর্যয়, এ প্রশ্নের জবাবে নেসকোর কর্মকর্তারা বলছেন, রংপুরে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা গড়ে ৮৫০ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ৬০০-৭০০ মেগাওয়াট। দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আগে দেড়’শ মেগাওয়াট পেলেও এখন মিলছে ৭৬ মেগাওয়াট।

কর্মকর্তারা আরও জানান, রংপুরে নেসকোর তিনটি ইউনিট আছে। প্রতিটি ইউনিটে দুইটি করে পাওয়ার ট্রান্সমিটার। গত শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে লালবাগ উপকেন্দ্রের ১০/১৩ এমভিএ’র একটি ট্রান্সমিটার বজ্রপাতজনিত কারণে বিকল হয়।

নগরীতে মোট ২টি ১০/১৩ এমভিএ পাওয়ার ট্রান্সফরমার দিয়ে প্রায় ৪৩ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এর একটি ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ায় প্রায় ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যে ঘাটতি পূরণে একটি ট্রান্সফরমার দিয়ে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। একারণে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

রংপুর অঞ্চলের নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন সরকার বলেন, নতুন একটি ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়েছে। তবে ট্রান্সফরমার চালু করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং, বিপদজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে দু-তিনদিনের মধ্যে পাওয়ার ট্রান্সফরমারটি চালু করা হবে আশাবাদ জানান তিনি।