সাকিবের নিষেধাজ্ঞা শেষ আজ

সাকিব আল হাসানের সেই ১ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ বুধবার ২৮অক্টোবর। বৃহস্পতিবার ২৯ অক্টোবর থেকে ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করতে পারবেন তিনি।
দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল ফেরার অপেক্ষায় দেশের লাখো ভক্ত-সমর্থক। অপেক্ষায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি)।

দেশসেরা ক্রিকেটার ও সাবেক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ফেরার রোমাঞ্চ ছুঁয়ে যাচ্ছে নির্বাচক থেকে শুরু করে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও। নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে হাতের কড় গুনছেন এই মুহূর্তে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা সাকিবও! এক বছরের যন্ত্রণাদায়ক অপেক্ষার শেষ হচ্ছে আজ। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আগামীকাল থেকে ‘মুক্ত’ হবেন সাকিব।

গত বছর ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় টর্নেডো বয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটে। তিনবার জুয়াড়ির কাছ থেকে অনৈতিক প্রস্তাব পেয়েও সেটি আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে না জানিয়ে একটা খামখেয়ালিই করেছিলেন তিনি। শাস্তি হিসেবে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে তিনি নিষিদ্ধ হন এক বছর।

সঙ্গে এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। সাকিবের ফেরা নিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান রোববার বলেন, ‘সাকিব ১০ নভেম্বর চলে আসবে। টুর্নামেন্টের (পাঁচ দলের টি ২০ টুর্নামেন্ট) আগে তো বটেই। সে খেলবে নিশ্চিত করেছে। সবার সঙ্গেই অনুশীলন করতে পারবে। এই সময়ে তার দলও ঠিক হয়ে যাবে। দলের সঙ্গে সবই করতে পারবে।’

শ্রীলংকা সফর হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দিয়েই সাকিবের প্রত্যাবর্তন ঘটত। কিন্তু শ্রীলংকা সফর না হওয়ায় দেশের মাটিতে পাঁচ দলের টি ২০ টুর্নামেন্ট দিয়েই তিনি ক্রিকেটে ফিরবেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেই টি ২০ টুর্নামেন্টের দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। দলের সঙ্গে অনুশীলনও করবেন। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে তার।

সাকিবকে নিয়ে বিসিবি এবার সতর্ক ছিল। এজন্য মিডিয়ার সঙ্গেও কথা বলতে মানা করা হয়েছিল। সাকিবের মুক্তিতে আইসিসির কোনো বাধা আছে কি না জানতে চাইলে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি সাকিবের ফেরা নিয়ে কোনো নির্দেশনা নেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তিনি মুক্ত হবেন।’

আইসিসি সাকিবকে মূলত দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এর মধ্যে এক বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। সাকিব আইসিসির নির্দিষ্ট কিছু শর্ত মেনে নেয়ায় স্থগিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে না। সাকিবের নিষেধাজ্ঞার কয়েক মাস পরই বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর প্রকোপ শুরু হয়। এজন্য খুব বেশি ম্যাচ মিস করতে হয়নি তাকে। মহামারীর শুরুতে সাকিব যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।

দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হওয়ায় আগে স্ত্রীকে সময় দিতেই সেখানে গিয়েছিলেন। নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য ১ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরেন। এরপর বিকেএসপিতে অনুশীলন করেছেন। এই সময়ে বাইরের কারও সঙ্গে দেখা করেননি তিনি। শ্রীলংকা সফর স্থগিত হয়ে যাওয়ায় আবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে ফেরেন।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসার আগে সাকিব বলেছিলেন, ‘আমি দু’রকম দিন গুনছি। কবে করোনা শেষ হবে, আরেকটা হল কবে আমার বহিষ্কারাদেশ শেষ হবে।’ করোনার কারণে বাংলাদেশ যখন লকডাউনে ছিল তখন অসহায় মানুষের জন্য সাহায্যের হাতও বাড়িয়েছেন সাকিব। নিজের ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিশ্বকাপের ব্যাট নিলামে তুলে তার অর্থ অসহায়দের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন।

গত এক বছরে সাকিব যেতে পারেননি ভারত ও পাকিস্তান সফরে। খেলতে পারেননি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজ। করোনার অভিশাপ পৃথিবীতে না এলে তার নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে বাংলাদেশ দল পাকিস্তানে গিয়ে আরেকটি টেস্ট খেলে আসত। যেত আয়ারল্যান্ড সফরে, ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলত দুই টেস্টের সিরিজ।

ছিল শ্রীলংকা সফর, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজ, এশিয়া কাপ এবং নিউজিল্যান্ডে টি ২০ সফরও। সবই পিছিয়ে গেছে। স্থগিত হয়ে গেছে টি ২০ বিশ্বকাপও। সব কিছুতেই তার দর্শক হয়ে থাকার কথা ছিল।

কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে খুব বেশি ক্রিকেট মিস করতে হয়নি তাকে। নভেম্বরের মাঝামাঝি পাঁচ দলের যে টি ২০ টুর্নামেন্ট দিয়ে ক্রিকেটে ফিরবেন সাকিব সেখানে তিনিই মূল আকর্ষণ। সাকিবকে ঘিরে সবার এই আগ্রহকে পুঁজি করেই টুর্নামেন্টের জন্য টিম স্পন্সর খোঁজার কাজ শুরু করেছে বিসিবি।

এমএস/রাতদিন