সাবাস শাহনাজ, ধন্যবাদ পুলিশ

স্বামী ছেড়েছেন! আছে দুই মেয়ে। তাদের মুখে অন্ন আর পড়ালেখার খরচ জোগাতেই বাইকে যাত্রী পরিবহন সেবাকে বেছে নিয়েছেন শাহনাজ। ফলে উবার বা পাঠাও অ্যাপের মাধ্যমে বাইক চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার, ঘরভাড়া এবং মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ। থাকেন ঢাকার মিরপুরে। বড় মেয়ে নবম, আর ছোট্ট মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে। এমনি জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই চলছিলেন সাহসী নারী শাহনাজ।

জীবন নামে যুদ্ধ ক্ষেত্রে হার না মানা মানুষ যিনি। সেই শাহনাজই জীবিকার একমাত্র বাইকটি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। আবার সকলের সহযোগিতায় তার বাইকটি ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশাও করছিলেন। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার রাতেই অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে শাহনাজের বাইকটি উদ্ধার করে পুলিশ। আটক হয় প্রতারক জনি। শাহনাজের চুরি যাওয়া বাইক উদ্ধারের পুরো ঘটনাটির সফল সমাপ্তির পথ দেখান তেজগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন।

জানা গেছে, যাত্রীবেশে এক ছিনতাইকারী সারাদিন রাইড নিয়ে শাহনাজের কাছে। পরে টাকা দেয়ার নাম করে ঢাকার খামার বাড়ি এলাকায় নিয়ে একটি অফিসের সামনে অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখে তাকে। কিছুক্ষণ পর এসে তার (শাহনাজ) কাছে জানতে চায় নারী হয়েও কীভাবে বাইকটি চালান। একপর্যয়ে ওই যাত্রীবেশে ছিনতাইকারি চাবি চাইলে সরল মনে বাইকের চাবি তুলে দেন শাহনাজ। এরপর চালানোর কথা বলে বাইক স্টার্ট দিয়ে দ্রæত সটকে পড়েন ছিনতাইকারী। বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বলটি হারিয়ে কাঁদতে থাকেন জীবন যুদ্ধে হার না মানা এই মানুষটি।

কোন রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে হেলমেট পরেই শাহনাজ পাগলের মতো বিভিন্ন মহলে ছুটে বেড়ান তার বাইকটি উদ্ধারের চেষ্টায়। একপর্যায়ে জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টল বাংলাডটকম কার্যালয়ে গিয়ে শাহনাজ কেঁদে কেঁদে জানান, স্ত্রী-সন্তান ফেলে তার স্বামী তাদেরকে ছেড়ে যাবার পর বোনের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা ধার করে স্কুটিটি কেনেছেন। এখনও তার দেনা শোধ হয়নি। তাকে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাডটকম।

পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও পোস্ট করার পরপরই ব্যাপক সাড়া পড়ে। অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শাহনাজকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। ভাইরাল হয়ে উঠে শাহনাজের বাইকটি ফেরত পাওয়ার দাবি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর হয়ে উঠে বাইকটি উদ্ধারে। সেই সঙ্গে শাহনাজকে অনেকেই বাইক কিনে দেয়ার ইচ্ছে পোষণ করলেও শাহনাজ সাহায্যের পরিবর্তে বাইকটি উদ্ধারের আকুতি জানিয়েছেন বারবার।

অবশেষে ছিনতাই হওয়া বাইকটি নারায়নগঞ্জ থেকে উদ্ধারের পর শাহনাজ আক্তার পুতুলের হাতে তুলে দেয়া পুলিশ। বুধবার দুপুরে বাইকটি শাহনাজের হাতে তুলে দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার।

এদিকে শাহনাজের বাইক চুরি ও উদ্ধারের বিষয়টি এখনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। অনেকে যেমন তার বাইক উদ্ধারের কারণে বাংলাদেশ পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তেমনি সাহসী শাহনাজের মতো হার না মানা মানুষই আমাদের সমাজে অনুপ্রেরণার এক নাম হতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।

এমআরডি-১৬/০১/২০১৯