নীলফামারীর সৈয়দপুরে দূর্ঘটনা কবলিত একটি মাইক্রোবাস এবং এর চালককে তিন দিন ধরে আটকিয়ে রেখে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। উপজেলার কামারপুকুর ইউপি চেয়ারম্যানসহ নয় জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির ওই মামলা দায়ের করা হয়।
শনিবার, ৯ মে বিকেলে মাইক্রোবাস চালক মো. রেজাউল হক নিজে বাদী হয়ে সৈয়দপুর থানায় ওই মামলাটি দায়ের করেছেন।
চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য আসামীরা হলেন, নুরে আলম সিদ্দিক ওরফে ভরসা (৩৫), কামারাপুকুর ইউপি সদস্য মো. আনছারুল (৪৩) ইউপি সদস্য মো. রাজিউল ইসলাম রাজু (৩৮), মো. মনসুর আলী (৫৫), ফিরোজুল ওরফে ফিরোজ (৩৪), মো. সাইফুল ইসলাম (৩৫), গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর আলম (২৯) এবং গ্রাম পুলিশ মো. জহির রায়হান (২৭)।
এ মামলার এজাহারভূক্ত দুই গ্রাম পুলিশকে আটক করেছে পুলিশ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গাজীপুর জেলার কাপাাসিয়া থানার দূর্গাপুর ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের মো. সুবেদ আলীর ছেলে মো. রেজাউল হক (৩০)এর একটি মাইক্রোবাস এর চালক গাজীপুর থেকে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। পরদিন ৭ মে সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে মাইক্রোবাসটি নিয়ে চালক রেজাউল হক নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ইউনিয়নের কামারপুকুর বাজারে পৌঁছেন।
এ সময় কামারপুকুর ইউনিয়নের চিকলী আলোকদিপাড়ার আব্দুল সাত্তারের ছেলে মো. ফজলু (৪০) কামারপুকুর বাজারে পাকা রাস্তার বাম দিক থেকে বাইসাইকেল নিয়ে আকস্মিক সৈয়দপুর-রংপুর মহাসড়কের উঠেন। এতে রেজাউল হকের মাইক্রোবাসের সঙ্গে ধাক্কায় বাইসাইকেল আরোহী ফজলু আহত হন।
এ সময় মাইক্রোবাস চালক রেজাউল মাইক্রোবাসটি থামিয়ে আহত ফজলুকে উদ্ধার করাকালে স্থানীয় লোকজন তাঁর মাইক্রোবাসটি ভাংচুর করেন। পরবর্তীতে চালক রেজাউল হক মাইক্রোবাসের ধাক্কায় আহত ব্যক্তির শ্বশুর মোবারক হোসেন মোবা’র সহযোগিতায় আহত ফজলুকে একটি অটোবাইকযোগে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান আহত ফজলুকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
ওই দিন বিকাল ৫টা সময় মনসুর ও রাজ্জাকুল মাইক্রোবাস চালক রেজাউল হককে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে জোরপূর্বক কামারপুকুরে নিয়ে আসেন। কিন্তু ওই দিন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যান না থাকায় জনৈক ফিরোজের বাড়িতে আটকে রাখা হয় মাইক্রোবাস চালক রেজাউলকে।
পরদিন গত ৮ মে ফিরোজের বাড়ি থেকে পুনরায় মাইক্রোবাস চালককে কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসা হয়। সেখানে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে মাইক্রোবাস চালক রেজাউল হকের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। কিন্তু মাইক্রোবাস চালকের কাছে কোন টাকা পয়সা না থাকায় তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান।
এ সময় ভরসা ও সাইফুল এক লাখ টাকা না দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে জানান। এ অবস্থায় মাইক্রেবাস চালক বিষয়টি তাঁর পরিবারকে অবগত করেন।
এদিকে, খবর পেয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশ গতকাল শনিবার বেলা আনুমানিক ২টায় কামারপুকুর ইউনিয়নের কামারপুকুর রিফজিপাড়ার মো. আজিজুল হকের ছেলে ফিরোজুল হক ওরফে ফিরোজের বাড়ি থেকে মাইক্রোবাস চালক রেজাউল হককে উদ্ধার করেন। আর কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর থেকে মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মাইক্রোবাস চালক রেজাউল হক নিজে বাদী হয়ে কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিমকে এক নম্বর আসামী করে ৯ জনের বিরুদ্ধে সৈয়দপুর থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় দুই গ্রাম পুলিশকে আটক করেছে পুলিশ।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মো. আতাউর রহমান। তিনি বলেন, মামলার এজাহারভূক্ত আসামী দুই গ্রাম পুলিশ মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মো. জহির রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জেএম/রাতদিন