বিমানবন্দরে হবে ডোপ টেস্ট, ওষুধ বহনেও কড়াকড়ি

নিরাপত্তার ফাঁক গলেই দেশ থেকে মাদক নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন কতিপয় অসাধু প্রবাসী শ্রমিক। এতে বিভিন্ন দেশে ক্ষুণ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের সুনাম। শ্রমিকদের মাধ্যমে বিদেশে মাদকপাচার ঠেকাতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। ডোপ টেস্টের (মাদক বা অ্যালকোহলজাতীয় নেশাজাত পণ্য শনাক্তের পরীক্ষা) মুখোমুখি হতে হবে প্রবাসী শ্রমিকদের, পাশাপাশি তাদের ওষুধ বহনেও কড়াকড়ি আরোপ হতে চলছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, অনেক প্রবাসী শ্রমিক বিভিন্ন কায়দায় মাদকপাচারের পাশাপাশি ওষুধের নামেও মাদক নিয়ে যান তার কর্মস্থল দেশে। সেখানে স্বদেশি শ্রমিকদের কাছে তা বিক্রি করেন। এ ধরনের অসাধু শ্রমিকদের রুখে দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডোপ টেস্ট ও ওষুধ বহনে কড়াকড়ি আরোপের চিন্তা করছে।

বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মাদকাসক্ত হয়ে পড়া এবং মাদক বহনের এ বিষয়টি বর্তমানে সরকারের অন্যতম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে একটি কমিটিও করা হয়েছে। সম্প্রতি কমিটির এক বৈঠকে সাম্প্রতিক চিত্র ও উত্তরণের উপায় নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব তরুণ কান্তি সিকদার।

বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর, বাংলাদেশ পুলিশ, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মাদকপাচার বন্ধে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে ডগ স্কোয়াড বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বৈঠকে অংশ নেয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স) ড. এ এফ এম মাসুম রব্বানী বলেন, বাংলাদেশের যাত্রীরা যখন বিমানবন্দর পার হন, তখন সিকিউরিটি চেক করে তাদের গায়ে বা লাগেজে তল্লাশি করে কোনো মাদক পাওয়া যায় না অথচ একই লাগেজে কাতারে গেলে মাদক পাওয়া যায়।

অনেক দেশ এগুলো বন্ধে বিমানবন্দরে ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করেছে। ডগ স্কোয়াড দিয়ে মাদক শনাক্ত করাও সহজ। বাংলাদেশও র‌্যাবের নেতৃত্বে বিমানবন্দরে এ ধরনের একটি ডগ স্কোয়াড মোতায়েনের কথা চলছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স) মোসাদ্দেক হোসেন রেজা বলেন, ডগ স্কোয়াডই একমাত্র মাদকপাচার বন্ধ করতে পারে। কারণ স্কোয়াডের এসব কুকুরকে মাদক শুঁকে শনাক্ত করতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

এ বিষয়ে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন শিমুল জাগো নিউজকে বলেন, বিগত দিনে আমরা বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি যাত্রীর কাছ থেকে ইয়াবা উদ্ধার করেছি। ঢাকায় আসা ইয়াবা অধিকাংশই কক্সবাজারের ফ্লাইটে আসে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে প্রবাসী শ্রমিকরা মূলত কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এবং ইতালিতে ইয়াবা নিয়ে যান।

তারা কখনও আচারের বয়ামের ভেতর, কখনও গরুর মাংসের তরকারির মধ্যে প্যাকেটে করে ইয়াবা নিয়ে যান। সাধারণত মেটাল ডিটেক্টর বা স্ক্যানিং করে এগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। এগুলো ধরতে হলে ম্যানুয়ালি অর্থাৎ যাত্রীর লাগেজ খুলে হাত দিয়ে বের করতে হয়। তবে শ্রমিকরা যেন এভাবে মাদক বহন না করতে পারেন, সেদিকে আমরা সতর্ক রয়েছি।

এনএ/রাতদিন