প্রভাবশালীর কাটাতারের বেড়ায় অবরুদ্ধ ৪০ পরিবার
প্রভাবশালীর কাটাতারের বেড়ায় অবরুদ্ধ নদীভাঙ্গা ৪০ ভূমিহীন পরিবার। লালমনিরহাট-বুড়িমারী পাকা সড়ক সংলগ্ন হাতিবান্ধার খোর্দ্দ বিছনদই গ্রামে এমন ঘটনার অবতারণা ঘটিয়েছে প্রভাবশালী চক্র। এই ৪০ পরিবারের লোকজনই নয়, পাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ এ সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন।
সংবাদ পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তা নদী গর্ভে বসত বাড়ী হা্রিয়ে পরিবার গুলো আশ্রয় নেয় জেলা পরিষদের পরিত্যক্ত এ সড়কে। আছেন তারা ৩/৪ যুগ ধরে। তাদের কেউ দিনমজুর, কেউ রিক্সা-ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। তারা দিন আনে দিন খায়।
এলাকারএকটি প্রভাবশালী চক্র তাদের উচ্ছেদ করার জন্য মরিয়া হয়ে লেগেছে। সড়কটি পাকাকরণের বরাদ্দ এসেছে। ইতোমধ্যে সড়কটি পাকাকরণে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন ফলক উন্মোচন করেছেন। এরই মধ্যে প্রভাবশালী চক্রটি চলাচলের অতি পুরাতন হ্যেরিংবন্ড সড়কটির অর্ধেকাংশ দখল করে কাটাতারের বেড়া দিয়েছেন।
ভুমিহীন পরিবার গুলোর দাবী, তাদের শেষ সম্বল থেকে উচ্ছেদ করার জন্যই একের পর এক ষড়যন্ত্র করে চলছে। নানান ভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। মেয়েরা স্কুলে যাওয়ার পথে বখাটে দিয়ে অত্যাচার করা হয়।
ভোটমারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা গোলাম মর্তুজা হানিফ জেলা পরিষদের পরিত্যাক্ত এ সড়কটি নিজের জমি বলে দখল করেন এবং কাটাতারের বেড়া নির্মাণ করেছেন। যেকারণে কাটাতারের বেড়ায় তারা অবরুদ্ধ হয়ে পরেছে। ৪০ পরিবারের মধ্যে ১২টি সংখ্যালঘু পরিবার,২টি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার রয়েছে।
নরেশ চন্দ্র জানান, ‘বাড়ি থেকে বের হওয়া যায় না, কাটাতারের বেড়ায় অবরুদ্ধ হামরা। সরকারী জমি দখল করে কাটাতারের বেড়া দিছে চেয়ারম্যানসাব। হামার রাস্তা বন্ধ করছে। প্রতি আইতোত ভয় দেখায়।’
ভুমিহীন অক্কাস আলী জানালেন, ‘৪০ বছর ধরি সড়োকত বাড়ী করে আছি । এলা হামারগুলাক তুলবার চায়। হামরা কোনটে যাইমো?’ ৪০বছরের জমিলা বেওয়া জানান, ‘হামরা নদী ভাঙ্গা মানুষ, অন্য কোন জায়গা নাই হামার ।’ তাহের মিয়া জানান, বাড়ি সড়বার জন্য হুমকি দেয়। হামালা ভুমিহীন মানুষ কোনটে যাইমো।’
এ ব্যাপারে গোলাম মর্ত্তুজা হানিফ জানান, ‘ওই জমি জেলা পরিষদের না, আমার জমি আমি কাটাতারের বেড়া দিয়েছি।’
তবে ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেজ্জাকুল ইসলাম সায়েদ জানান,‘ সড়ক নির্মাণ দ্রুত করা হবে ওই স্থান দিয়ে। ইতিমধ্যে টেন্ডার হয়ে গেছে। ভুমিহীন পরিবার গুলো অন্য স্থানে সরে গেলে রাস্তার কাজ শুরু করা হবে। তা’না হলে সরকারি অর্থ সরকারের ঘরে চলে যাবে।’
তবে, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. মতিয়ার রহমান জানান, ‘জেলা পরিষদের পরিত্যাক্ত সড়কে নদী ভাঙ্গা অসহায় পরিবার গুলো আশ্রয় নেয়। তারা ৪০ বছর থেকে ৫০ বছর ধরে বসবাস করে আসছে। এ অবস্থায় তাদেরকে জেলা পরিষদ থেকে উচ্ছেদ করার কোন প্রশ্ন উঠে না। তবে পাশ দিয়ে ছোট রাস্তা হলে হয়তো পরিবার গুলোর সামান্য জমি ছাড়তে হবে।’
এদিকে, জেলা প্রশাসক,লালমনিরহাটের নির্দেশে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রবিউল হাসান শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রাতদিনকে জানান, ‘কাটাতারের বেড়া দিয়ে কাউকে অবরুদ্ধ করে রাখা উচিত হয়নি। আর, যে স্থানে কাটাতারের বেড়া দিয়েছে , তা’ দেখা যাচ্ছে জেলা পরিষদের হবে । তবে, পুনরায় সার্ভেয়ার দিয়ে মেপে সীমানা নির্ধারণ করা হবে। তার আগে কাটাতারের বেড়াটি সড়িয়ে নিতে বলা হয়েছে।’
এসকে/রাতদিন