একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনের জন্য চার হাজার ৪৯২টি ভোট কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৭৩ হাজার ৪১৩জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা।
এর মধ্যে এক হাজার ৮৩১টি ভোটকক্ষের জন্য ছয় স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। মোতায়েন করা হয়েছে দুই হাজার সেনাসদস্যসহ ৭২ হাজার ৪৯০ জন বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ সদস্য।
এর বাইরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে ৭১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং ২৭০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স পরিচালনার জন্য দেয়া হয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। বিচার বিভাগের অধীনে ১৪টি নির্বাচন তদন্ত কমিটি কাজ করছে মাঠে।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, রংপুর বিভাগে মোট ভোটার এক কোটি ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ২৬৪ জন।
এরমধ্যে রংপুরের ৬ টি সংসদীয় আসনে ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৫ জন, পঞ্চগড়ের ২টি আসনে ৭ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৮ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৩টি আসনে ৯ লাখ ৯৫ হাজার ১৭৬ জন, দিনাজপুরের ৬ টি আসনে ২২ লাখ ৬ হাজার ৪৪০ জন, নীলফামারীর ৪টি আসনে ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৮ জন, লালমনিরহাটের ৩টি আসনে ৯ লাখ ১৫ হাজার ৭৮৮ জন, কুড়িগ্রামের ৪টি আসনে ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৪ জন এবং গাইবান্ধার ৫টি আসনে ১৭ লাখ ৮৪ হাজার ৫৪৫ জন ভোটার রয়েছেন।
‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সজাগ রয়েছে। আশা করছি ভোটারগন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন’
সূত্রটি জানায়, রংপুর বিভাগের ৪ হাজার ৪৯২টি ভোটকেন্দ্রে ২২ হাজার ৯৩৩টি কক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য ইতোমধ্যেই ৮ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ১১৬ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৪ হাজার ৪৯২ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ২২ হাজার ৯৩৩ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং ৪৫ হাজার ৮৬৬ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করার পর তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
উত্তরের এ’ বিভাগের ৩৩ আসনের মধ্যে রংপুর-৩ (সদর-আংশিক সিটি করপোরেশন) আসনে ভোটগ্রহণের জন্য ইলেক্ট্রনিক্স ভোটিং মেশিন-ইভিএম এবং বাকী ৩২টি আসনের জন্য স্বচ্ছ ব্যালটবক্স, ব্যালট পেপার, সীলসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর বিকেলের আগেই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে গেছেন।
পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী পুরো বিভাগে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।
অপরদিকে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন করে প্রায় ১ হাজার ৫০০ ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে আরও অতিরিক্ত ১ জন করে সর্বমোট ৫ হাজার ৯৯২ জন অস্ত্রধারী পুলিশ নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
প্রতিটি কেন্দ্রে অস্ত্রসহ একজন আনসার এবং লাঠিসহ ছয় জন পুরুষ এবং চার জন মহিলা আনসারসহ সর্বমোট ৪৯ হাজার ৪১২ জন এবং প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে মোট ৪ হাজার ৪৯২ জন গ্রাম পুলিশ নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এর বাইরে রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ড, বিভাগের ২৭টি পৌরসভার ২৪৩ওয়ার্ড এবং ৫৮ টি উপজেলার ৫৩৬টি ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার ৩০ জন সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
২টি ওয়ার্ড-ইউনিয়ন মিলে একটি করে গাড়িতে ৫ জন সেনা সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় মোতায়েন থাকবে । এছাড়াও প্রতিটি সিটি/পৌরসভা/ উপজেলায় বিজিবির ৩ প্লাটুন করে মোট ৮৬ প্লাটুন বিজিবির মোট ৮ হাজার ৮৬০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যারা প্রতিটি সিটি/পৌরসভা/উপজেলায় ৫ ভাগে বিভক্ত হয়ে মাঠে থাকবেন। এছাড়াও এই বিভাগে প্রায় ১ হাজার ২০৪ জন র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যারা প্রতিটি সিটি, পৌরসভা ও উপজেলায় ১৪ জন করে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছে।
আইনশৃংখলা বাহিনীর এসব স্ট্রাইকিং ফোর্সকে পরিচালনা এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনার জন্য ৩টি করে ইউনিয়ন/ওয়ার্ড মিলে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে ২৭০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যেই এই বিভাগে ৭১ জন জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৭১ টি ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা আজ শনিবার থেকে ১ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত মাঠে কাজ করবে। এই সময়ে তারা নির্বাচনী অপরাধসমূহ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৮৯ এর সেকশন ১৯০ এর সাব সেকশন ১ এর অধীনে আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচার পরিচালনা করবেন। এছাড়াও এই বিভাগে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নির্বাচন পূর্ব ও পরের অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে ১৪টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাদের দায়িত্বে আছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার যুগ্ম ও জেলা দায়রা জজ এবং সহকারী জজ মর্যাদার বিচার বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ।
নির্বাচন উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সজাগ রয়েছে। আশা করছি ভোটারগন নির্বিঘ্নে ভোটা দিতে পারবেন’।
এবার রংপুর বিভাগের ৩৩ টি সংসদীয় আসনে ২১৫ জন প্রার্থী নেমেছেন ভোটের মাঠে।
এইচএ/২৯.১২.১৮
উত্তরের মুখ