পাটগ্রামের সেই ‘কাচারীঘর’ এখন ভূমি গবেষণা জাদুঘর, একটি প্রচেষ্টার গল্প

কোচবিহার মহারাজার আমলের প্রায় তিনশ’ বছরের পুরনো একটি ভবনকে সংস্কার করে ভূমি গবেষণা জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে। ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি এলাকায় ‘কাচারীঘর’ নামেই পরিচিত। এটি এখন এই অঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থাপনার ক্রমবিকাশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নির্দশন।

জানাগেছে, কোচবিহার মহারাজার সময় থেকেই এই ভবনটি ভূমির খাজনা আদায়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিছু আগেও পাটগ্রাম উপজেলার পৌর ভূমি অফিস হিসেবে এই ভবনটি ব্যবহার করা হতো।

সম্প্রতি পাটগ্রাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপক কুমার দেব শর্মা এই ভবনটিকেই গড়ে তুলেন ভূমি গবেষণা জাদুঘর হিসেবে। চলতি বছরের ০১ আগস্ট ভবনটি সংস্কার করে ভূমি ব্যবস্থাপনার ক্রমবিকাশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নির্দশন সমূহ সংরক্ষনের কাজ শুরু করেন তিনি।

দীপক কুমার দেব শর্মা। যার হাত ধরে শুরু

উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা বহু পুরনো নিদর্শন এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে প্রাচীন আমলের জমির পরিমাপ, খাজনা আদায়, জমি বর্গাসহ বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য উপাত্ত। সংরক্ষন করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে রাজা- জমিদারদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রাদি।

এখানে সংরক্ষিত প্রাচীন নির্দশনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে তৎকালীন রাজা -–মহরাজাদের ব্যবহৃত ৩ টি সিন্ধুক, তরবারি, গান্টার চেইন ( ভূমি পরিমাপ যন্ত্র) প্রভৃতি। জনসাধারণের প্রদর্শনের জন্য উম্মুক্ত রয়েছে ভূমি সংক্রান্ত ফরম গ্যালারী ও ভূমি ব্যবস্থপনার ইতিহাস।

ভূমি ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত জ্ঞানার্জনের জন্য এখানে স্থাপন করা হয়েছে ভূমি বিষয়ক একটি লাইব্রেরী। লাইব্রেরীতে রয়েছে এ সংক্রান্ত নানা বইয়ের সমাহার। দর্শনার্থী ও তৃনমুল পর্যায়ের ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাদের ভূমি বিষয়ক বই পড়ার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

এর পাশে বাগানে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ফুলের গাছ। নৈসর্গিক এই সৌন্দর্য উপভোগ ও প্রাচীন ঐতিহ্য স্বচক্ষে দেখার জন্য প্রতিদিন এইা জাদুঘরে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।

লাইব্রেরী ভবনের একাংশ। ছবি: রাতদিন

যার হাত ধরে এই যাদুঘরের যাত্রা শুরু, পাটগ্রাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপক কুমার দেব শর্মা জানালেন, ‘সেই রাজার আমল থেকে ভবনটি ব্যবহৃত হতো খাজনা আদায়ে। ভবনটি প্রায় তিনশত বছরের পুরনো। ভূমি ব্যবস্থপনার হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণ করার জন্য জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রাচীন উপকরণ সংরক্ষণ করার চেষ্টা করছি। সমাজের সকল স্তরের মানুষ এগিয়ে এলে এটি আরও সমৃদ্ধ হবে।’

এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম প্রাচীনকালের জমি সংক্রান্ত নানা বিষয়ে জানতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

জেএম/রাতদিন