কুড়িগ্রামে বিদ্যালয় উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা হরিলুট, মুখ খুলছেন না কেউ

কুড়িগ্রামের দায়সারাভাবে কাজ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বিগত অর্থবছরে নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলায় বিদ্যালয়গুলোতে মেরামত, স্লিপ, রুটিন, পার্ক, ওয়াস, ব্লক ও প্রাক-প্রাথমিক প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ আসে; কিন্তু দু’ উপজেলার অনেক বিদ্যালয়ে নামমাত্র কাজ করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

করোনাকালে স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় প্রধান শিক্ষক দায়সারাভাবে কাজ করে তুলে নিয়েছেন বরাদ্দের পুরো টাকাই। সরেজমিনে নাগেশ্বরী উপজেলার হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাঙ্গামোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ,উত্তর সুখাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালাটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুটি বাগডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে জানা গেছে, বরাদ্দের টাকায় এসব স্কুলে কাজ হয়েছে নামমাত্র।

উত্তর সুখাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজা খাতুনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে, সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই দু-একটা কথা বলেই তার প্রভাষক স্বামীর হাতে ফোন তুলে দেন। প্রধান শিক্ষকের স্বামী জানান, আমার স্ত্রী দুবার স্ট্রোক করেছে। যা বলেন আমাকে বলেন ,আমি সবকিছুই জানি।

বরাদ্দের টাকার কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী যতটুকু কাজ করেছে পাশের স্কুলগুলো খোঁজ নেন। আমার স্ত্রীর তাদের তুলনায় একটু হলেও ভালো কাজ করেছে। তারা তেমন কাজ করেননি। তিনি যে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেছেন, তা তার কথাতেই বোঝা যাচ্ছিলো।

নাগেশ্বরী উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ (জুনিয়র) জানান, এসব কাজের প্রত্যয়ন পত্র উপজেলা প্রকৌশলী তদন্ত করার পর দেন এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্যার প্রত্যায়ন পত্র দেন । এসব বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে তথ্য নেন। আমাদের করার কিছুই নেই ।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যোগীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় , লক্ষীর খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৈতার খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁনদের খামার খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে জানা গেছে, সেখানেও দায়সারা ভাবে কাজ করা হয়েছে।

রাজারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একজন  রাজনৈতিক নেতার আত্মীয়র পরিচয় দিয়ে তার দায়সারা কাজের কথা এড়িয়ে যান। চৈতার খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কয়েকজন সাংবাদিক গেলে, এলাকাবাসীরা ঘিরে ধরে বলেন, প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক নামমাত্র কাজ করেছে। তার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও অনেক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা বললে তিনি জানান তদন্ত করে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছি। এর বেশি কিছু না বলেই ফোন কেটে দেন।

এদিকে দু উপজেলার বিভিন্ন স্কুল ঘুরে জানা গেছে, গত অর্থবছরে  কাজ সমাপ্তির নিয়ম থাকলেও এখন পর্যন্ত অনেক স্কুলে কাজ শেষ হয়নি। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন এমনটাই প্রত্যাশা সচেতন মহলের।

এসআই/রাতদিন

মতামত দিন