হাতীবান্ধায় শ্বাশুড়ীকে নিয়ে ‘পালালেন’ জামাই! থানায় শ্বশুর, হাসপাতালে মেয়ে

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় শ্বাশুড়ীকে নিয়ে ভেগে যাওয়ার ঘটনায় জামাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন শ্বশুর। এ ঘটনায় গোটা উপজেলা জুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। উপজেলা জুড়ে এটিই এখন টক অব টি টাউন।

মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী জামাই এমদাদুল ইসলাম এনদাকে প্রধান আসামী করে  হাতীবান্ধা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন শ্বশুর নাছির উদ্দিন। উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের রমনীগঞ্জ গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।

এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত জামাই এমদাদুল ইসলামের স্ত্রী নাজলী বেগম (২২) এর উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তিনি বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। নির্যাতনের শিকার আহত নাজলী বেগম উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের রমনীগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা ।

অভিযুক্ত জামাই এমদাদুল ইসলাম এনদা(৩৫) উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের রমনীগঞ্জ গ্রামের তরিফ উদ্দিনের ছেলে। এছাড়া সে বড়খাতা বাজারের হাজী জামে মসজিদ এলাকার অটোরিকসার পার্স ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগে নাজলী বেগমের সাথে বিয়ে হয় এমদাদুল ইসলাম এনদার। বিয়ের পর থেকে জামাই-শাশুড়ীর মাঝে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর মাঝে মাঝেই জামাই বাড়ি আসতো শাশুড়ি আছিতোন নেছা। এভাবেই ধীরে ধীরে জামাই-শাশুড়ির সম্পর্ক অবৈধ সম্পর্কে মোড় নেয়।

চলমান ওই সম্পর্ক কেউ আচ করতে না পারলেও একদিন ধরা পরেন স্ত্রী নাজলী বেগমের চোখে। এতেই ঘটে লংকা কান্ড। জামাই-শাশুড়ির অবৈধ সম্পর্কে বাধা হয়ে দাড়ানোয় নির্যাতনের খড়গ্‌ নেমে আসে তার উপর।

এ অবস্থায় কয়েকদিন ঘরে তালাবদ্ধ করে তার উপর নির্যাতন চালানো হয়। নিরবিচ্ছিন্ন এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একদিন রাতের আধারে দরজা ভেঙ্গে পালিয়ে যায় নাজলী। ঠাই নেয় উপজেলার ধুবনী এলাকার খালা শাহিনা বেগমের বাড়িতে।

আহত নাজলীকে দেখে দ্রুত তাকে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করান খালা। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শাশুড়িকে নিয়ে ভেগে যায় জামাই এমদাদ।

উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, টানা কয়েকদিনের নির্যাতনে ফলে সারা শরীরে ব্যাথার যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে নাজলী বেগম। এ সময় কথা হলে নাজলী বেগম বলেন, বিয়ের বেশ কিছুদিন পরেও  সব ঠিক ছিলো। কিন্তু কি থেকে কি হল? বলেই ডুকরে কেঁদে উঠেন নাজলী।

চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, মা আমার স্বামীর বাড়িতেই বেশী থাকত। কিছুদিন পর খেয়াল করি যে আমার চেয়ে মায়ের প্রতিই আমার স্বামীর টান বেশি। প্রথমে ভাবতাম শাশুড়িকে হয়তো ভালোবাসে বেশি। কিন্তু সেই ভুল ভেঙ্গে যায়। স্বামীর সাথে মাকে অন্য অবস্থায় দেখে ফেলি।

আর এর প্রতিবাদ করে ফল না পেয়ে উল্টো আমার উপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ্‌। ৭ দিন ঘরে তালা দিয়ে আটকে রাখেন আর চলে অসনীয় নির্যাতন।

এদিকে অভিযুক্ত জামাই এমদাদুল ইসলাম শাশুড়িকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,  আমার স্ত্রী-ই রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। বিষয়টি আমি এলাকার সবাইকে জানিয়েছি। আমি আমার শাশুড়ীকে নিয়ে পালিয়ে যাইনি।

এ বিষয়ে মামলার বাদী নাছির উদ্দিন বলেন, আমি দিনমজুরী মানুষ। কাজ করতে প্রায় নোয়াখালীতে যাই। আর সেই সুবাদে আমার স্ত্রী জামাইয়ের বাড়িতে থাকত। পরে খবর পেয়ে বাড়ি ফিরে আসি। আমার স্ত্রীর ব্যাপারে জামাইয়ের কাছে জানতে চাইলে বিভিন্ন কথা বলে এড়িয়ে যায়। তাই আমি জামাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করি।

এ বিষয়ে নাজলী বেগমের খালা শাহিনা বেগম জানান, গত ১০ দিন আগে আমার বাড়িতে জামাই এমদাদুল ইসলাম (এনদা) ও আমার বড়বোন আছিতোন নেছা (৪০) আসেন। এর পর একদিন আমার বাড়িতে অবস্থান করেই বড় বোনকে নিয়ে জামাই এমদাদুল ইসলাম (এনদা) ভেগে যান। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বোনের কোন খোঁজ পাচ্ছিনা। শুনতে পাচ্ছি সে নাকি আমার বোনকে বিয়ে করছেন।

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম জানান, এ ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এসআর/রাতদিন

মতামত দিন